নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার মুখেই ইস্তফা দিলেন দেশের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। শনিবার বিকেলেই তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান। রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনের পক্ষ থেকে গোয়েলের ইস্তফা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। আচমকাই কেন নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন প্রাক্তন আমলা, তা নিয়ে নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। যদিও ইস্তফা নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি গোয়েল। তবে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ভোট নির্ঘন্ট ঘোষণা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে গোয়েলের ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গায়ে যেভাবে ‘বিজেপি বান্ধবের’ তকমা লেগেছে, তার অংশীদার হতে রাজি হননি পদত্যাগী কমিশনার।
১৯৮৫ সালে পঞ্জাব ক্যাডারের আইএএস হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অরুণ গোয়েল। ৩৭ বছর ধরে একাধিক প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছিলেন গণিত নিয়ে মাস্টার ডিগ্রিধারী দুঁদে হামলা। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। মোদি সরকারের জমানায় ভারী উদ্যোগ মন্ত্রকের সচিবের দায়িত্বও সামলেছিলেন। ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন গোয়েল। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। যদিও গত বছরের অগস্ট মাসে গোয়েলের নিয়োগকে বৈধ বলে রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
এদিন গোয়েলের ইস্তফার ফলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শুধু থেকে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মানসপুত্র’ হিসাবে পরিচিত রাজীব কুমার। কয়েক মাস আগেই অবসর নিয়েছিলেন অন্যতম নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে। ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এবং নির্বাচন কমিশনার অরুণই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আইন সংশোধন করেছে মোদি সরকার। এখন থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিজেদের ‘ইয়েসম্যানদের’ নিয়োগ করতে পারবে কেন্দ্রের শাসকদল। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে হাতের পুতুল করে লোকসভা ভোটে জিততে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। নির্বাচন কমিশনারের দুই ফাঁকা পদে বিজেপি সমর্থক আমলাকে বসিয়ে কমিশনকে বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে।’