নিজস্ব প্রতিনিধি: এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে কৃষকদের কথা মেনে নিতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হল বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে দীর্ঘ লড়াই চালিয়েছেন কৃষকরা, যে লড়াই লড়তে গিয়ে ঝড়ে গিয়েছে অন্তত ৭০০ প্রাণ সোমবার সেই লড়াই শেষমেশ সাফল্যের মুখ দেখল। কিন্তু এর পরেও নিজেদের অবস্থান নিয়ে অনড় কৃষকরা। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরেই জানালেন সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে যতদিন না কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও আইন পাস করা হচ্ছে ততদিন চলবে কৃষকদের এই আন্দোলন। এদিন তিনি কার্যত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেও এখনই ঘরে ফিরছেন না কৃষকরা।
সোমবার শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই তড়িঘড়ি লোকসভা এবং পরে রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে দেওয়া হয় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল ২০২১। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, তাদের কোনও মতামত জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার আগেই কার্যত তৎকাল গতিতে এই বিল পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাদের কথা মেনে কেন্দ্র সরকার সোমবার এই বিল পাস করল তাঁরা কিন্তু কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে মোটেই খুশি নন। উল্টে কৃষকনেতা রাকেশ জানালেন, ‘সরকার চায় দেশে কোনো আন্দোলনই না হোক। কিন্তু আমরা যতদিন পর্যন্ত এমএসপিসহ বাকি দাবিগুলো পূরণ না হচ্ছে ততদিন আন্দোলন থেকে সরব না।’ অন্যদিকে এদিন তিনি আগামী সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন আরও বড় আন্দোলন কর্মসূচির ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত এদিন কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘২৬ জানুয়ারির আর বেশি দেরি নেই। অন্যদিকে আমাদের চার লক্ষ ট্রাক্টর তৈরি আছে। কৃষকরাও তৈরি। তাই সরকারের অবিলম্বে উচিত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা।’
উল্লেখ্য, গুরুনানক জয়ন্তীর দিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণার পরেই বিক্ষোভরত কৃষকরা জানিয়েছিলেন সংসদের অধিবেশনে যতদিন পর্যন্ত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস করা হচ্ছে ততদিন তাঁরা তাঁদের আন্দোলন থেকে সরবে না। পাশাপাশি তাঁদের আরও কিছু দাবি রয়েছে। যেমন, এমএসপি অর্থাৎ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কিত একটি বিল কেন্দ্রীয় সরকারকে পাশ করাতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, এই এক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তাঁদের নামে এক গুচ্ছ মামলা করা হয়েছে সরকারি তরফে। সেই সমস্ত মামলা অবিলম্বে ফিরিয়ে নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। তবেই তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ থেকে সরে নিজেদের বাড়ি ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।