নিজস্ব প্রতিনিধি: থেমে গেল চিরতরে ঘুঙুরের শব্দ। থেমে গেল ছবি আঁকাও। থেমে গেল তবলা আর গানও। থেমে গেল গল্প বলাও। দেশ হারাল এক রত্নকে। রবি রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন কত্থক নৃত্যের শীর্ষ শিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। রবিবার রাতে দিল্লির বাড়িতে নাতির সঙ্গে খেলার মাঝেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। রাতেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সাকেত হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান তিনি। সম্প্রতি তাঁর কিডনির অসুখ ধরা পড়েছিল, ডায়ালিসিসও চলছিল। তবুও সব কিছু থেমে গেল হুট করে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক নেমে এসেছে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে।
১৯৩৮-এর ৪ ফেব্রুয়ারি লখনউতে জন্ম। আসল নাম ব্রিজমোহন মিশ্র। তাঁর বাবা ও গুরু অচ্ছন মহারাজ, দুই কাকা শম্ভু মহারাজ ও লাচ্চু মহারাজও প্রখ্যাত কত্থক-শিল্পী। কার্যত তাঁদের হাত ধরেই কত্থককে নিজের জীবনের ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছিলেন বিরজু মহারাজ। কলকাতার সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ীর যোগ। ১৯৫২ সালে এই শহরেই জীবনে প্রথম মঞ্চে পারফর্ম করেন। মন্মথ নাথ ঘোষের বাড়িতে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪ বছর। বাবা মারা গিয়েছেন। জীবনে দাঁড়াবার জন্য লড়াই করছেন। সে সময় ডাক কলকাতায়। কাকা লচ্ছু মহারাজ তখন মুম্বইয়ে কোরিওগ্রাফির কাজ করছেন। আর এক কাকা শম্ভু মহারাজ ব্যস্ত ছিলেন লখনউতেই নিজের কাজে। মা এক পাতানো ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন বিরজুকে। ধীরে ধীরে এই শহরেই নিজেকে মেলে ধরেছিলেন এই শিল্পী। তবে শুধু কলকাতায় তাঁকে আটকে থাকতে হয়নি। কলকাতা ছাড়িয়ে, বাংলা ছাড়িয়ে, বিরজুর কত্থক ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের আনাচে কানাচে। দেশ-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন। দেশে মাটিতে তো বটেই বিদেশেও রয়েছে তাঁর প্রচুর ছাত্রছাত্রী।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একাধিক ধারার সঙ্গে যেমন যুক্ত ছিলেন মহারাজ। বাংলা থেকে বলিউড মায় মারাঠী সিনেমাতেও কোরিওগ্রাফারের কাজও করেছেন বিরজু মহারাজ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্তর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-র কোরিওগ্রাফি। ছবিতে দুটো গানের কোরিওগ্রাফি করেন। তার মধ্যে একটা ছিল ‘কানহা মে তোসে হারি’। গানটার সঙ্গে ছিল আমজাদ খানের অভিনয়। ‘বিশ্বরূপম’ ছবিতে কোরিওগ্রাফির জন্য চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পান বিরজু মহারাজ। বলিউডে ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘উমরাও জানের’ মতো ছবিতে বিরজু মহারাজের কোরিওগ্রাফি নজর কাড়ে। ১৯৮৩ সালে পদ্মবিভূষণ পান বিরজু মহারাজ। পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ও কালীদাস সম্মান।