নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দিল না শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মামলায় শীর্ষ আদালত বলেছে, বিয়ের অধিকার কখনও মৌলিক অধিকার হতে পারে না। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ‘আইন প্রণয়নের বিষয়টি সংসদের অধিকারভুক্ত। সেই অধিকারে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’ শীর্ষ আদালতের রায়ে মোদি সরকারেরই জয় হয়েছে। যদিও সর্বসম্মতভাবে রায় ঘোষণা হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিই সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন।
সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতি চেয়ে দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে জমে থাকা মামলাগুলিকে একত্র করে গত জানুয়ারিতে একসঙ্গে শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শীর্ষ আদালত। মামলা শোনার জন্য গঠিত হয়েছিল পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।ওই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি এস নরসিংহ। টানা ১০ দিনর শুনানি পর্বের শেষে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গত ১১ মে রায় সংরক্ষিত রেখেছিল।
দেশের শীর্ষ আদালতে প্রথম থেকেই সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতির বিরোধিতা করে এসেছে মোদি সরকার। বাকি রাজ্য সরকারগুলির কাছেও এ বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। মাত্র সাতটি রাজ্যের সরকার তাদের মতামত জানিয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকার সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতার দাবির বিরোধিতা করেছে। কেন্দ্রের তরফে সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতির বিরোধিতা করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করেছিলেন, ‘এটা নেহাতই ‘শহুরে অভিজাত সমাজের ভাবনা’। একই সঙ্গে তিনি এমন ‘স্পর্শকাতর বিষয়ে’ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার সংসদের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের কোনও রায় দেওয়া উচিত নয়। যদিও শুনানি পর্বে একাধিক বার কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছেন সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতিরা। শুনানিপর্বে ৩৭৭ ধারা সংশোধন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ‘যদি সমকামিতা অপরাধ না হয়, তা হলে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক সমলিঙ্গের মানুষের বিয়ের মতো স্থিতিশীল বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধা কোথায়?’
এদিন সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। রায়ে বলা হয়, ‘সমকামিতা শুধু সমাজের উঁচু আর অভিজাত মহলেই সীমাবদ্ধ নয়। রূপান্তরকামী কোনও পুরুষের যেমন মহিলাদের অধিকার রয়েছে, তেমনই রূপান্তরকামী কোনও মহিলারও পুরুষকে বিয়ে করার অধিকার রয়েছে।’ বিশেষ বিবাহ আইনে পরিবর্তন আনা হবে কিনা, তা সংসদই ঠিক করবে বলেও রায়ে বলা হয়।