নিজস্ব প্রতিনিধি: সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court) সাংবিধানিক বেঞ্চে(Constitution Bench) চলছে সমলিঙ্গের বিয়ের(Same Sex Marriage) আর্জি জানিয়ে দায়ের হওয়া গুচ্ছের মামলার যৌথ শুনানি। কার্যত এখন মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেওয়া উচিত কী উচিত নয়। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ষষ্ঠ দিনে পড়ল। প্রথম থেকেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার(Modi Government) এই আর্জির বিরোধিতা করে এসেছে। শুধু তাই নয়, আদালতের এক্তিয়ারের প্রশ্ন তুলে বার বার সলিসেটর জেনারেল দাবি করে এসেছেন সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পাবে কী পাবে না তা আদালতে ঠিক না হয়ে সংসদে ঠিক করা হোক। যদিও সেই সব দাবিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ মামলার শুনানি চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এদিন বেঞ্চ কেন্দ্রকেই পাল্টা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য পৃথক শৌচাগার, নোটিস গুজরাত হাইকোর্টের
কেন্দ্রের তরফে এই মামলার শুনানির সময়ে বার বার দাবি করা হয়েছে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পাওয়া উচিত কী উচিত নয় সেই বিষয়ে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ না করে তা যেন সংসদের হাতে ও কেন্দ্র সরকারের হারতে ছেড়ে দেয়। সেই বিষয়টি এদিন উত্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়(Chief Justice D Y Chandrachur)। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধরুন তর্কের খাতিরে আমরা মেনেই নিলাম যে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টি সংসদ ও কেন্দ্র সরকারের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হল। সেক্ষেত্রে এই বিয়ের বৈধতা পাওয়ার সঙ্গে আরও যে সব সামাজিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার বিষয় জড়িয়ে রয়েছে সেগুলি সমলিঙ্গের দম্পতিরা কীভাবে পাবে? মানে জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ইন্সিওরেন্সে নমিনি ঠিক করা, যৌথ সম্পত্তি ক্রয়, এই বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্র সরকার কী ভেবে ছে আর এই অধিকারগুলি কীভাবেই বা কেন্দ্র সরকার এই সমলিঙ্গের দম্পতিদের প্রদান করা হবে? আরভ পাঁচটা দম্পতি যে সব সামাজিক সুযোগ সুবিধা ও অধিকার যেভাবে ভোগ করে সেই একই সুযোগ-সুবিধা অধিকার পেতে গেলে কী করতে হবে?’ যদিও এই প্রশ্নের কোনও যথাযথ উত্তর সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহতা দিতে পারেননি।
আরও পড়ুন বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস মানেই ‘ধর্ষণ’ নয়, রায় হাইকোর্টের
এর পাশাপাশি এদিন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে মামলার শুনানিকালে। প্রথমত, কেন্দ্রের তরফে বার বার বলা হচ্ছে সমকামিতা বা সমলিঙ্গের বিষয়টি নিছক একটি পছন্দের বিষয়। সেটা ব্যক্তি বা মহিলার সত্ত্বাকেন্দ্রীক নয়। কিন্তু সলিসেটর জেনারেলের এই দাবিকে থামিয়ে দিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সাফ জানান, ‘পিটিশানকারীরা জানিয়েছেন সমকামিতা বা সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়টি তাঁদের পছন্দের বিষয় নয়। সেটাই তাঁদের সত্ত্বা।’ দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রের তরফে বার বার জানানো হচ্ছে দেশে সামাজিক ভাবে এমন কোনও ভয়ভীতি, বিদ্বেষ নেই যে LGBTQ মানুষেরা নিজেদের আত্মপ্রকাশে ভয় পাবেন। আসলে সেই সংখ্যক মানুষই নেই এই দেশে বা সমাজে। কেন্দ্রের এই দাবিকে খণ্ডন করে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি জানান, ‘যদি সত্যি করেই সমাজে বা দেশে ভয়ভীতির পরিবেশ বা বিদ্বেষ না থেকে থাকে তো LGBTQ মানুষেরা প্রকাশ্যে কেন নিজেদের সত্ত্বাকে তুলে ধরেন না?’ সেই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর দিতে পারেননি সলিসেটর জেনারেল। শেষে তৃতীয় পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, ‘আমরা মানে সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমেরও অনেক দেশের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে গিয়েছি। তাই আর পিছনে হেঁটে যেতে বলবেন না। সেটা সম্ভবও নয়।’