নিজস্ব প্রতিনিধি: তিস্তায় হড়পা বানের(Teesta Flash Flood) ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত মোট ১১জনের দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে ৬টি দেহ নিখোঁজ সেনা জওয়ানদের(Indian Army Jawan)। হড়পা বানের প্রথম শিকারই হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ট্রুপ। রাতের অন্ধকারে পাহাড় থেকে নেমে আসা তিস্তার ভয়ংকর স্রোতের মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর গোটা ৪ ট্রাক। জলের তোড়ে সেই সব ট্রাক ভেসে যায়। ট্রাকে থাকা প্রায় ৮০জন জওয়ানের মধ্যে ২৩জন সেনা জওয়ান ভেসে যান তিস্তার বুকে। বাকিরা কোনওরকমে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পেরেছিলেন। সেই নিখোঁজ সেনা জওয়ানদের মধ্যে গতকাল রাতেই ১জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। বাকি ২২জনের মধ্যে এদিন বিকাল পর্যন্ত ৬ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ১৬ জন এখনও নিখোঁজ।
এদিকে সিকিমে(Sikkim) হড়পা বানের জেরে ১৪টি সেতু কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে রাজ্যের একটা বড় অংশই সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক(Gangtok) ও দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই সব এলাকায় বিপর্যয়ের মাত্রা ঠিক কী সেটা না জানা যাচ্ছে, না বোঝা যাচ্ছে। কেননা গোটা এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৩৮জন মানুষের নিখোঁজের খবর স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক নাবালকও রয়েছে। যদিও বেসরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৫০ ও নিখোঁজের সংখ্যা ৩৫০। কেননা বহু জায়গাতেই তিস্তার বুকে তীব্র স্রোতে অনেকেরই দেহ ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেই সব দেহ পরে উদ্ধার না হওয়ায় সরকারি ভাবে এখনই মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো যাচ্ছে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিকিমের বুকে যে মহাপ্রলয় ঘটে গিয়েছে তাতে করে ৫০০জন মারা গেলেও সেটা খুবই কম হবে। কেননা তিস্তার উচ্চ অববাহিকায় অনেকেই রাতের অন্ধাকারে ঘুমের মধ্যেও ভেসে গিয়েছেন। এদের সন্ধান আদৌ আর কোনওদিন মিলবে কিনা তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে।
সরকারি হিসাবে সিকিমের নানা প্রান্তে এখন প্রায় ৩ হাজার পর্যটক(Tourist) আটকে রয়েছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার জন এই রাজ্যের বাসিন্দা। এরা কে কোথায় কী ভাবে আছেন তা নিয়ে তাঁদের পরিবারের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর তরফে এই সব মানুষদের জন্য বিশেষ ফোনলাইন চালু করা হয়েছে। সেই লাইনের মাধ্যমে যারা সিকিমে আটকে আছেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ২ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে আটকে পড়া পর্যটকদের কীভাবে নিরাপদে সমতলে নামিয়ে আনা যাবে তা নিয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে সিকিম রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি নবান্নের অন্দরেও। কেননা প্রথমে ঠিক হয়েছিল ২ রাজ্য এবং সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে এদের দ্রুত সমতলে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাধ সেধেছে প্রকৃতি। অবিশ্রান্ত বর্ষণ চলছে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের বুকে। রবিবারের আগে আবহাওয়ার কোনও পরিবর্তন ঘটবে না বলেই মৌসম ভবন জানিয়েছে। তাই কপ্টার পরিষেবাও চালু করা যাচ্ছে না।