নিজস্ব প্রতিনিধি: অযোধ্যার(Ayodhya) রামনমন্দির(Rammandir) প্রতিষ্ঠা নিয়ে দেশজুড়ে গেরুয়া শিবির যতই হাওয়া তুলুক না কেন, তা মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না দেশের সনাতনী হিন্দু সমাজের একটা বড় অংশই। যেভাবে অসম্পূর্ণ মন্দিরে রামলালার মূর্তির প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধন হচ্ছে তা যেমন তাঁরা ভাল চোখে দেখছেন না, তেমনি মেনে নিতে পারছেন না রামমন্দিরকে ঘিরে গেরুয়া শিবিরের নগ্ন রাজনীতির খেলা। আর তাই রামমন্দির প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানকে কার্যত বয়কট করেছেন দেশের ৪ শঙ্করাচার্য। বাংলার(Bengal) বুকে মকরসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগরে(Gangasagar) আসা পুরীর শঙ্করাচার্য(The Shankaracharya of Puri) স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ(Swami Nischalanand Saraswati Maharaj) এবার সেই অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে রাজনীতি এবং অসম্পূর্ণ মন্দিরে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা ঘিরে তাঁর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন। সঙ্গে সাফ জানিয়ে দিলেন, দেশের ৪ শঙ্করাচার্য নিজেদের ইগোর জন্য এই অনুষ্ঠান বয়কট করছেন এমন নয়। ধর্মীয় তথা শাস্ত্র বিরোধী রীতিনীতির জন্যই তাঁরা এহেন পদক্ষেপ করছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) রাজ্যে এসে গঙ্গাসাগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ জানিয়েছেন, ‘শঙ্করাচার্যরা তাঁদের নিজেদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ও তা ধরে রাখতে জানেন। এটা কোনও অহংয়ের বিষয় নয়। কিন্তু আমরা কী এটা আশা রাখি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন রামমন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন তখন আমরা বাইরে অপেক্ষা করবো? ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার অর্থ কী ঐতিহ্যের বিলুপ্তিকরণ? শাস্ত্রের অলঙ্ঘণ? ধর্মীয় রীতিনীতিকে অগ্রাহ্য? ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক গুরুর অযাচিত হস্তক্ষেপ আসলে দাদাগিরিই। ধর্মীয় ক্ষেত্রের উন্নয়ন করো। কিন্তু ধর্মীয় ক্ষেত্রে দাদাগিরি দেখানো ঠিক নয়। এতে রাষ্ট্রপ্রধানের অপমান হয়। পিএমের(Narendra Modi) উচিত, ধর্মের বিষয়কে ধর্মীয় জায়গাতেই রাখা। সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়।’
উল্লেখ্য, গত শনিবারও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। জানিয়েছিলেন, ‘অসম্পূর্ণ মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা বা মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা শাস্ত্র বিরোধী। হিন্দু মন্দির ধ্বজাহীন হতে পারে না। তাই অসম্পূর্ণ মন্দিরের উদ্বোধন কোনওভাবেই শাস্ত্রসম্মত নয়। আর অ-ব্রাহ্মণকে নিয়ে গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা, তাও মানা যায় না। রামলালার মন্দিরের জন্য যে সেবায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ ভগবানকে স্পর্শ করতে পারেন না। সেবায়েত ছাড়া ওখানে কারও যাওয়াও উচিত নয়। সনাতনী ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে বিভাজনভিত্তিক যে হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে দেশে তা মুখ বুজে মেনে নেওয়া যায় না। যাঁরা দেশকে শাসন করছেন, তাঁদের শাসন করার দায়িত্ব শঙ্করাচার্যের। মূর্তি প্রতিষ্ঠা শাস্ত্রসম্মত বিধি দ্বারা করা উচিত। এখানে লোভ, ভয় ও ভাবনার কোনও জায়গা নেই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হল সংবিধানসম্মত বিধি পালন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে নিজের নাম প্রচার করার চেষ্টার অর্থ, ভগবানের সঙ্গে বিদ্রোহ করা আর নিজেকে হনুমানের গদা বানিয়ে ফেলা। এসব করে ভবিষ্যতে চুরমার হওয়ার রাস্তা নির্ধারণ করে ফেলা হচ্ছে। সব জায়গায় নিজের কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব প্রমাণ আর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা উন্মাদের লক্ষণ। উন্মাদ, এই পরিচয় কারও দেওয়া উচিত নয়। এর আগেও অনেক রাষ্ট্রনেতা এসেছেন। যেমন প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাধাকৃষ্ণন। এঁদের কারও মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোনও উন্মাদনা ছিল না।’