নিজস্ব প্রতিনিধিঃ হাজার চেষ্টার পরেও মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে যখন স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে ঠেলাগাড়িতে চাপিয়েই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করার পরেও মুখে ফিরিয়েছে হাসপাতালে। পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়, সাফ জানিয়ে মুখের ওপর বন্ধ করেছে দরজা। আর এইভাবে সারাদিন ধরে পথে ঘুরতে ঘুরতেই শেষ হয়েছে একটি জলজ্যান্ত প্রাণ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক অসুস্থ বৃদ্ধাকে ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে কোনওক্রমে গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে এই মর্মান্তিক খবর এবং সেই সঙ্গে আবারও কাঠগড়ায় উঠেছে যোগীরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
ঘটনাটি ২৮ মার্চের। যে বৃদ্ধের ছবিটি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাঁর নাম শকুল প্রজাপতি। বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধের বাস উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালিয়া নামের একটি গ্রামে। অত্যন্ত গরীব ওই বৃদ্ধের স্ত্রী হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন গত সপ্তাহে। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় হাতে টানা ঠেলাগাড়িতে স্ত্রীকে চাপিয়েই এক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজায় দরজায় ঘুরতে শুরু করেন ওই বৃদ্ধ। শেষ পর্যন্ত একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে দেখতে রাজি হন এবং কিহু প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন হাজার অনুরোধের পরেও কোনও অ্যাম্বুলেন্স চালকই বিনা পয়সায় তাঁদের জেলা হাসপাতালে পৌঁছে দিতে রাজি হন না। শেষে কোনও উপায় না পেয়ে ওই ঠেলাগাড়িতে চাপিয়েই পাঁচ ঘটনার চেষ্টায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই জেলা হাসপাতালে পৌঁছান শকুল।
কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। জেলা হাসপাতালো ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি এবং অন্য একটি হাসপাতালে রেফার করে বলে অভিযোগ। এইভাবে সারাদিন গরমের মধ্যে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে শেষে যুদ্ধে হার মানেন ওই বৃদ্ধা এবং ওই ঠেলাগাড়িতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সম্প্রতি এই ঘটনাটি সামনে আসার পরেই শুরু হয়েছে জোর চাপানউতোর। নড়েচড়ে বসেছে যোগী প্রশাসনও। কেন ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা করা হয়নি টা জানতে একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠক স্বয়ং। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রীও।