নিজস্ব প্রতিনিধি: তিস্তায়(Teesta River) আসা হড়পা বানে(Flash Flood) বিধ্বস্ত বাংলার(West Bengal) পড়শি রাজ্য সিকিম(Sikkim)। ইতিমধ্যেই সেখান থেকে প্রায় ১৫০জনের মারা যাওয়ার খবর সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে। বুধবার দুপুর থেকে তিস্তার জলস্তর কমতে থাকলেও রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফের ফুঁসতে শুরু করে দিয়েছে তিস্তা। আর তার জেরে ২৯ মাইল এলাকার কাছে বড়সড় ধস নামে এদিন সকালে। ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিস্তা ব্রিজ থেকে সিকিম যাওয়ার পথে বেশ কিছু জায়গায় বড় আকারের ধসের কারণে জাতীয় সড়ক নিচের দিকে বসে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধীরে ধীরে তিস্তার নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
সিকিমের লোনক হ্রদ ফেটে তিস্তায় আসা হড়পা বানে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। একইসঙ্গে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। তাই মৃত্যু মিছিল ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে সেটা কেউই বলতে পারছেন না। বৃষ্টি না থামলে তিস্তার ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৃত এবং নিখোঁজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম সরকার সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার পর্যটক রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন। বেশ কিছু পর্যটক নিখোঁজও হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫জন পশ্চিমবঙ্গের। নিখোঁজ ৫জনের মধ্যে ৩জন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের বাসিন্দা। বাকি ২জন নদিয়া জেলার কল্যাণীর বাসিন্দা বলেই বেসরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। সরকারি ভাবে শুধুমাত্র সিকিমেরই ১৫০জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু পর্যটকও রয়েছেন। নিখোঁজদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
হড়পা বানের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সিকিমের পাকিয়ং জেলার রংপো, গ্যাংটক জেলার অন্তর্গত ডিকচু এবং সিংটাম এলাকা এবং মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকা। মৃত ও নিখোঁজদের মধ্যে বেশিরভাগই এই সব এলাকারই বাসিন্দা। হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি সেতু। কার্যত তাদের আর কোনও অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। পরিস্থিতি জরিপ করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আরও বিপদ এবং আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের মতই আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হবে সিকিমে। সিকিম এবং দার্জিলিংসহ পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় আগামী ৪৮ ঘন্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সিকিমের কিছু কিছু এলাকায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। এর ফলে সিকিমের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই কারণে ওই এলাকায় ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। সেখানে যে সমস্ত এলাকায় ক্ষতি হতে পারে সেখানের বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গজলডোবা জলাধার(Gajaldoba Barrage) থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ গতকাল বিকাল থেকেই ধাপে ধাপে কমানো হয়েছে। কিন্তু এদিন সকাল থেকেই যেভাবে তিস্তায় জলস্তর ফের বাড়তে শুরু করেছে তাতে এদিন দুপুর থেকেই ফের এই জলাধার থেকে জল ছাড়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।