নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ‘এখন গোলাপ দিয়ে কি হবে? আমি এটা নিয়ে কি করব? ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিলে আমাদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তেই হত না।’ দেশে ফিরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ঠিক এই জোরালো ভাষাতেই মোদি সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করলেন ইউক্রেন ফেরত এক ছাত্র। তাঁর অভিযোগ, ইউক্রেনের মাটিতে থাকাকালীন কাউকেই কোনওভাবে সাহায্য করছে না ভারতীয় দূতাবাস। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ওই দেশে যারা কার্যত প্রাণ হাতে করে আটকে রয়েছেন তাঁদের নিজেদেরই কোনও না কোনও উপায়ে হাঙ্গেরি পৌঁছাতে হচ্ছে। হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর পরে তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে।
মতিহারি বিহারের বাসিন্দা দিব্যাংশু সিং বৃহস্পতিবারই সকালে ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরি হয়ে ভারতে পৌঁছেছেন। মৃত্যু যে কতটা ভয়ংকর সেটা কার্যত সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এই কয়েকদিন। এখনও চোখেমুখে যুদ্ধের সেই আতঙ্ক স্পষ্ট। সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি বিমানবন্দরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই যখন তাঁকে গোলাপ দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন আর তিনি নিজেকে সামলাতে পারেননি। তাঁকে দেওয়া গোলাপটি ধরেই ওই ভারতীয় ছাত্র কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলে, ‘এখন আমরা এখানে আছি, আমাদের এটি দেওয়া হচ্ছে। কী লাভ? আমরা এটি দিয়ে কী করব? কিছু হলে আমাদের পরিবার কী করবে? সেখানে আমাদের কি হয়েছে সেই ব্যাপারে কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেননি।’ এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘সময়মত ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের প্রদর্শনের কোনও প্রয়োজনই হত না। আমাদের পরিবার সদস্যেরা এই কয়েকদিন কতটা উদ্বিগ্ন ছিল সেটা কারোর ধারনাই নেই।’
ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওই ছাত্র আরও বলেন, ‘আমরা সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে যাওয়ার পরেই সাহায্য পেয়েছি। এর আগে কেউ কোনও সাহায্য করেনি। আমরা যা কিছু করেছি, সব নিজেরাই করেছি। আমরা দশজনের একটি দল একসাথে হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য ট্রেনে চড়েছিলাম। সেই ট্রেনে রীতিমতো তিলধারণের জায়গা ছিল না।’ তবে ওই ছাত্র আরও জানিয়েছেন যে তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের সাহায্য করেছে। কেউ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। এটা সত্য যে পোল্যান্ড সীমান্তে কিছু ছাত্র হয়রানির শিকার হয়েছে। এর জন্য আমাদের সরকার দায়ী। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে আমরা এত সমস্যার সম্মুখীন হতাম না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সর্বপ্রথম তাঁর নাগরিকদের চলে যেতে বলে, কিন্তু সেই সময়ে ভারত সরকারের তরফ থেকে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না?’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন যে ,আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বুখারেস্ট থেকে আটটি উড়ান, রোমানিয়ার সুসেভা থেকে দুটি, স্লোভাকিয়ার কোসিস থেকে একটি, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট থেকে পাঁচটি এবং পোল্যান্ডের রেজেসো থেকে তিনটি উড়ানে ৩৭২৬ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই সঙ্গে আরও জানা গিয়েছে যে, আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার আরও ৪৮০০ জন ভারতীয়কে যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।