নিজস্ব প্রতিবেদনঃ মহিলা মৃৎশিল্পী কাকলি পাল এক সময় ঘরের বাইরে পা দিতেন না। শাশুড়ি ঘরের বাইরে আসতে দিতেন না তাঁকে। কিন্তু কালের নিয়মে পাল্টে গেল তাঁর জীবন ও জীবিকা নির্বাহ। দুই শিশুকে রেখে মারা গেলেন কাকলির স্বামী। বায়না নেওয়া ছিল কালিপুজোর । কিভাবে কি করতে হবে তা জানতেন না কাকলি। বলা চলে অপটু হাতে কাজ সামলেছেন তিনি। পাশে ছিলেন কাকলির বাবা।
কাকলি জানান, স্বামী যখন মারা যান তখন কাকলি পড়েছিলেন স্বাভাবিকভাবেই অথৈ জলে। ঘরে দুটি সন্তান। একজনের বয়স তখন ১ বছর আর অন্য জনের ৭ বছর। শুধু নিজে বাঁচা নয় সঙ্গে বাচ্চা দুটিকেও বাঁচাতে হবে এই ভেবে ময়দানে নেমে পড়েন কাকলি পাল। যে কাকলি ঘর থেকে বেরোতেন না সে এরপর ধীরে ধীরে সব বেড়াজালকে ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন মাটিকে রুজিরুটি করতে।
শিল্পী মালা পাল, কথা বললেই বোঝা যায় তাঁর মধ্যে অদম্য সাহস, ইচ্ছা আর একাগ্রতা। মেজদা গোবিন্দ পালের কাছে তাঁর হাতেখড়ি। মালার বাবা কখনই চাননি মেয়ে মালা স্টুডিওতে আসুক। কারণ, এই কাজ পুরুষদের। পরিশ্রমের এই কাজে মেয়েরা পেরে উঠবে কী করে? কিন্তু তারপর স্টুডিওতে এসে ছোট দুর্গা, মিনিয়েচার, মূর্তি তৈরিতে হাত পাকালেন মালা। এখন গড়েন তাঁর স্টুডিওতে কুমোরটুলির আগামিদিনের কারিগর।
আরেক মহিলা মৃৎশিল্পী কাঞ্চি পাল। বাবার ব্যবসাকে আঁকড়ে চলছে তাঁর পেশা। বাবার থেকে তুলনায় অনেক বেশি দুর্গা বানান কাঞ্চি। তবে মহিলা বলে রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কনফিডেন্টই কাঞ্চির এই কাজের মূল ইউএসপি। ব্যবসাকে নিজের মত করে দাঁড় করিয়েছেন। একমাত্র ছেলে থাকে বিদেশে। সংসারে এসেছে সুদিন। ফ্ল্যাট কিনেছেন কাঞ্চি সঙ্গে করে চলেছেন মূর্তি তৈরির কাজ।
মেয়েরা সবেতে এগিয়ে আছে কুমোরটুলিই বা কেন পিছিয়ে থাকবে? এই প্রশ্ন করা হলে এই তিন শিল্পী জানান সময় বদলেছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে মেয়েদের সব কাজেই এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে বসে থাকলে হবে না। কুসংস্কারকে ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। এহেন মহিলা মৃৎশিল্পীরা পুরুষশাসিত সমাজ তথা গোটা কুমোরটুলির অন্দরে গড়ে ওঠা নানা বিধিনিষেধকে তুড়ি মেরে তৈরি করেছেন নিজেদের পরিচয়।