সুস্মিতা ঘোষ: আর মাত্র ১২ দিন বাকি, পুজো প্রায় চলেই এলো। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। প্রতি বছর এই চারটে দিনের আনন্দে মেতে ওঠে গোটা বাংলা। আমজনতা থেকে সেলিব্রিটি সবাই যেন সারা বছরের দুঃখ, দুর্দশাগুলিকে এই চারটে দিন আলমারিতে তুলে রেখে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। ইতিমধ্যেই আমজনতা থেকে সেলিব্রিটি সকলেরই পুজোর কেনাকাটা থেকে শুরু করে পুজো নিয়ে নানা পরিকল্পনা করা শেষ। নতুন নতুন ফ্যাশনের পাশাপাশি এই চারটে দিন কোথায় কোথায় খাওয়া হবে বা কার কার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া হবে সব পরিকল্পনা যেন কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এই বছরের পুজোটা যেন একটু বেশি স্পেশাল সবার কাছে। একদিকে দু-বছর করোনার দাপটে ঘরবন্দি জীবন থেকে নিস্তার মিলেছে, অন্যদিকে কলকাতার দুর্গাপুজো পেয়েছে আন্তর্জাতিক হেরিটেজ তকমা। সব মিলিয়ে গোটা বঙ্গবাসী এবার উমাকে স্বাগত জানাবে চরম উৎফুল্লতা নিয়ে। বাঙালির যে কোনও উৎসবেই মোটামুটি সবারই নজর থাকে সেলিব্রিটিদের ওপরেও। তাঁদের পুজোর পরিকল্পনা কী, পুজোতে কোথায় থাকবেন, কী পোশাক পরবেন, ডায়েট কী পুরোপুরি ভুলে যাবেন? সব নিয়েই থাকে মানুষের নানারকম কৌতুহল। সেটাই জানাবো আজ আপনাদের। সম্প্রতি পুজো পরিকল্পনা জানতে আমাদের ‘এই মুহূর্তে’ নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি সুস্মিতা ঘোষ যোগাযোগ করেছিলেন বাংলার অন্যতম সেরা ব্যান্ডের জনপ্রিয় গায়কের সঙ্গে। প্রায় ১১ মিনিটের কথোপকথনে তিনি জানালেন এই বছরে তাঁর পুজোর পরিকল্পনাগুলি। পাশাপাশি আরও নস্টালজিক কিছু তথ্যও শেয়ার করলেন তিনি আমাদের সঙ্গে।
বাংলার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ক্যাকটাস’। ১৯৯২ সালে গঠিত হওয়া এই ব্যান্ডের প্রসার সম্বন্ধে আমাদের সবারই কম-বেশি ধারণা রয়েছে। তৎকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত একইভাবে বাংলার তরুণ প্রজন্মের কাছে আইকনিক নাম হয়ে আছে ‘ক্যাকটাস’। বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এক আলাদা দিশারীর নাম ক্যাকটাস। সঙ্গে বাংলার প্রথম পেশাদার রক ব্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত ‘ক্যাকটাস’। এই ব্যান্ডের অন্যতম প্রাণভ্রমরা হলেন গায়ক সিধু, যার প্রকৃত নাম সিদ্ধার্থ রায়। যার কন্ঠে সৃষ্টি হয়েছে, একাধিক আলোড়ন সৃষ্টিকারী গান। বাংলার সঙ্গীত ইতিহাসে ক্যাকটাসের অবদান অনস্বীকার্য। হ্যাঁ, সম্প্রতি গায়ক তথা সুরকার সিধু ওরফে সিদ্ধার্থের কাছে আমরা ফোনালাপেই সেরে নিয়েছিলাম তাঁর এই বছর পুজোর পরিকল্পনা কী কী? পুজোতেও কী ব্যস্ত তিনি? সব প্রশ্নের উত্তর গায়ক নিজেই আমাদেরকে বললেন।
দাদা কেমন আছেন?
ভালো আছি তবে খুব ব্যস্ত শো নিয়ে।
পুজোর পরিকল্পনা কী? দু বছর আমাদের ঘরবন্দি জীবন কেটেছে, এখন শহর মোটামুটি সুস্থ, তাই এই বছর পুজোতে নিজেকে কী ভাবে সাজাচ্ছেন?
গত দু বছর ঘরবন্দীর পাশাপাশি রোজগারবন্দিও ছিলাম। কেননা গত দু বছর তেমন শো পাইনি। তবে এই বছর অনেকটাই নিজেকে ফিরে পেয়েছি। প্রচুর শো করছি। সব মিলিয়ে ঠিক ঠাক কেটে যাচ্ছে।
পুজোর দিনগুলিতে কলকাতায় থাকছেন?
না না, পুজোর চারদিনই আমাদের ব্যাঙ্গালুরুতে কাটবে। ওখানে শো রয়েছে। ষষ্ঠীর দিন সকালে চলে যাচ্ছি, দশমীর দিন বিকেলে ফিরব।
পুজোর দিনগুলিতে বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকছেন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কী বলছে
না আমি তো একা মানুষ তেমন সমস্যা নেই, তবে বন্ধু-বান্ধবরা একটু দুঃখ পেয়েছে। যেহেতু আড্ডাতে ওদের সঙ্গে যোগদান দেওয়া হবেনা।
কলকাতাকে মিস করবেন এই কটা দিন?
হ্যাঁ, সাম্প্রতিক কালে কলকাতার পুজোর সঙ্গে একটু বেশি জড়িয়ে গিয়েছি। কলকাতার কিছু থিম পুজো এই বছর আমি ডিজাইন করেছি। গত কয়েক বছর ধরেই করছি। তেলেঙ্গা বাগান এবং সল্টলেক E E ব্লকের পুজো প্যান্ডেলের থিম করেছি।
পুজোর কিছু স্মৃতি
গত দু বছর আগে কলকাতার কয়েকটি পুজোর থিম মিউজিক আমি করেছিলাম। এবং তাতে কিছু পুরস্কারও পেয়েছিলাম। তাতে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম, কারণ আমার কিছু সৃষ্টি পুরস্কৃত হয়েছিল তাতে স্বাভাবিকভাবেই ভালো লেগেছিল। ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার সঙ্গে অডিও মিডিয়ামের যে একটা মেলবন্ধন তৈরি করতে পেরেছিলাম এবং তা সম্মানিতও হয়েছিলাম, তা মনে থাকবে বহুদিন।
পুজোতে যদি কলকাতা থাকতেন কী ভাবে কাটাতেন?
পুজোর পরিক্রমা করতাম, বন্ধুদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু পুজো মন্ডপে প্যান্ডেল হপিং করা, আড্ডা দেওয়া এইসব।
কলকাতার পুজো আন্তর্জাতিক হেরিটেজ তকমায় ভূষিত হল, এই নিয়ে আপনি কলকাতাবাসী হয়ে কতটা গর্বিত
অবশ্যই খুবই গর্বিত কারণ এটা অনেকদিন আগেই আমাদের প্রাপ্য ছিল। কারন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যে শিল্পচর্চা হয়, অর্থাৎ পুজোকে কেন্দ্র করে যেসব শিল্প বা ইন্সটলেশন আর্ট বা বিভিন্ন নতুন নতুন থিমের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা দিয়েই পুজো মন্ডপ সেজে উঠছে সেটি সত্যিই নজরকাড়া। যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কোথাও নেই। আর এই উৎসবকে ম্যাচ করার মত এই পৃথিবীতে আর কোনো উৎসব নেই বলেই ধারণা। সেক্ষেত্রে এই পুজোকে অনেক আগেই আন্তর্জাতিক তকমা দেওয়া উচিত ছিল। ক্রিসমাসের সময় গোটা ইউরোপ বা আমেরিকা যেমন সেজে ওঠে, বা রিও কার্নিভ্যালের সময় যেভাবে সেজে ওঠে, সেইসব অনুষ্ঠান গুলি ব্যাপকতার দিক দিয়ে আমাদের দুর্গাপুজোর কাছে অনেকটাই পিছিয়ে।
বাংলার ঐতিহ্য বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো আস্তে আস্তে আধুনিকতার ছোঁয়াতে হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলি টিকিয়ে রাখতে কি করা উচিত
যার পক্ষে সম্ভব হবে সে করবে নয়তো করবে না। কারণ বনেদি বাড়ির পুজোগুলি টিকিয়ে রাখতে দরকার প্রচুর অর্থের এবং প্রচুর মানুষের। যখন এই দুটি কিছুই নেই সুতরাং তা ভেঙে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ, এই পুজো টিকিয়ে রাখতে যদি এমন কিছু স্পনশরশিপের ব্যবস্থা করা হয় তবে হয়তো সেক্ষেত্রে পুজো গুলিকে কনটিনিউ করা যাবে।
পুজোতে ব্যাঙ্গালুরু যাচ্ছেন, সুতরাং বাঙালি খাবার থেকে একেবারেই বিচ্ছেদ ঘটে যাবে
না না তা একেবারেই নয়, আমরা যাচ্ছি বাঙালি অনুষ্ঠানে, ওখানকার বাঙালি পাড়াই আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানেও এক্কেবারে বাঙালি আদব-কায়দা, মহিলারা শাড়ী পরেন। পুরুষরা ধুতি-পাঞ্জাবীতে সাজেন। কোনোভাবেই বাঙালির সংস্কৃতির থেকে আলাদা হচ্ছি না। আমাদের সবার জন্যই থাকবে বাঙালি খাবার। যাতে এক টুকরো কলকাতার পরশ পাবই পাব।
আপনার পরবর্তী অ্যালবাম
‘খোদা জানে না’, যেটি নভেম্বরে মুক্তি পাবে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, গায়ক যেমন তাঁর প্রতিভার দিকে গুণী তেমনি ব্যক্তিগত দিক থেকেও দুর্দান্ত মনের মানুষ।