নিজস্ব প্রতিনিধি: না, কলকাতা পুরভোটে দু’জনে একই ওয়ার্ডে মুখোমুখী লড়াইয়ে ছিলেন না। আলাদা আলাদা ওয়ার্ডে লড়লেও তাঁদের লড়াইটা ছিল ভিন্ন। কারণ শ্বশুরমশাই সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নির্দল হিসেবে ৭২ নম্বর থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরই জামাই অরূপ চক্রবর্তী আবার তৃণমূলেরই টিকিটে ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ছিলেন। ফলে এই পরিবারের দিকে মিডিয়ার নজর ছিল প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই। ভোটগণনার দিন অবশ্য এল চুরান্ত ট্যুইস্ট। ১,৬০০ ভোটে হেরে গিয়েছেন শ্বশুরমশাই সচ্চিদানন্দ। আর মাত্র ২৭৯ ভোটে জিতে গিয়েছেন জামাই অরূপ। কিন্তু অরূপের কৃতিত্ব কোনওভাবেই খাঁটো করা যায় না। কারণ দীর্ঘদিনের বাম দূর্গ ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফোটালেন জোড়াফুল। অপরদিকে হতাশায় ডুবে গেলেন শ্বশুরমশাই সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা পুরসভার ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ওরফে ‘মনুয়াদা’ এক সময়ে কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকলেও এবারের পুরভোটে তাঁকে টিকিট দেয়নি দল। ফলে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হন প্রবীণ এই তৃণমূল নেতা। একসময় তিনি ছিলেন, কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোট বেড়ে যাওয়ায় দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। তবুও তিনি তৃণমূলের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। আশা ছিল ২০২১-এর পুরভোটে দল তাঁর উপরে আস্থা রাখবে। কিন্তু তা হয়নি। ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের জায়গায় টিকিট পান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ রঞ্জন বক্সী। দলের দাবি ছিল, পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তরুণদের উপর ভরসা রাখতে চাইছেন দলনেত্রী। যা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেননি সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নির্দল হিসেবেই মনোনয়ন পেশ করেন।
অপরদিকে, তাঁরই ছোট মেয়ের বর অর্থাৎ তাঁর জামাইকে ৯৮ ওয়ার্ডের কঠিন ময়দানে টিকিট দেয় তৃণমূল। তরুণ এই নেতার হাতেই ‘বাম দূর্গ’ পতনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, তাঁকে ভোটে লড়তে মানা করেছিলেন শ্বশুরমশাই সচ্চিদানন্দ। কিন্তু জামাই সেটা মেনে নেননি, বরং ভোটের ময়দানে তিন দশকের বাম দূর্গে ফাটল ধরিয়ে জিতে গিয়েছেন অরূপ চক্রবর্তী। ভোটে জেতার পর অরূপকে পাশে নিয়ে তাঁর লড়াইকে স্বীকৃতি দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। তিনি বলেন, অরূপের এই জয় ঐতিহাসিক।