নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের ভোটগণনা। কিন্তু সকলের নজরে থাকবে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে। সদ্য প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের দুই ঘনিষ্ঠের লড়াই এই ওয়ার্ডকে লাইমলাইটের আলোয় নিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে মিডিয়ার যাবতীয় ফোকাসও পড়েছে দক্ষিণ কলকাতার অভিযাত এলাকা বালিগঞ্জের এই ওয়ার্ডেই। কারণ এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী বিদায়ী কাউন্সিলর তথা কো অর্ডিনেটর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায় এবং সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্য়ায়।
খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ সদ্য প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোনকে টিকিট দিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে শাসকদলকে। রাতারাতি টিকিট পান সুদর্শনা। কারণ ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর কাজ সর্বজনবিদীত। ফলে মঙ্গলবার কার কপালে উঠবে জয়টীকা, সেটা নিয়েই চর্চা এখন বাংলার রাজনৈতিক মহলে। একুশের বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে ৭৩০ ভোটের লিড পেয়েছিলেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। কিন্তু সুদর্শনা জিতেছিলেন দেড় হাজারের বেশি ভোটে। এবার তাঁর লিড কত হবে সেটা নিয়েও চলছে চর্চা।
গত সাড়ে ছয় বছরে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুরন্ত কাজ করেছেন সুদর্শনা, এরপরও এবার টিকিট পেতে হয়েছে চুরান্ত নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে। প্রথমে টিকিট দেওয়া হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্য়ায়কে। এরপরই ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে। ফলে প্রার্থী বদল করতে হয় শাসকদলকে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা আস্থা রাথে কাজের মানুষ সুদর্শনার ওপরই। গত ১৬ ডিসেম্বর বাঘাযতীনের প্রচার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও বিশেষ করে উল্লেখ করেছিলেন ৬৮ ওয়ার্ডের কথা। একসময় সুদর্শনা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে বাংলার মিডিয়ারও নজর রয়েছে তাঁর ওয়ার্ডের দিকে। কারণ সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্য়ায়ও এক সময় তৃণমূল কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১০ সালে ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন তনিমা। কিন্তু ২০১৫ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। কিন্তু সুদর্শনা সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
সুদর্শনা ও তনিমার লড়াই মনে করিয়ে দিচ্ছে পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন দাপুটে কংগ্রেস নেতা অনিল মৈত্রের সঙ্গে বাংলার পরিচিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক জ্ঞান মজুমদারের লড়াই। সেবার কলকাতা পুরভোটে কংগ্রেসের দাপুটে নেতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকা তথা রাজ্যের প্রখ্যাত চিকিৎসক জ্ঞান মজুমদার। কিন্তু পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু। বর্তমানে গড়িয়াহাট ট্রেনিং স্কুলের সামনে রাস্তাটির নাম এই অনিল মৈত্রের নামেই রাখা হয়েছে। আবার ১৯৫২ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডাঃ মেঘনাথ সাহার কাছে লোকসভা ভোটে পরাস্ত হয়েছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তৎকালীন দাপুটে কংগ্রেস নেতা প্রভু দয়াল হিমাতসিঙ্কা। তবে বর্তমান ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুই রাজনৈতিক নারীর লড়াই অন্য মাত্রা নিয়েছে দুজনেই একসময় একই দলের সদস্য থাকায়।