নিজস্ব প্রতিনিধি: দেখতে দেখতে ৩৫ বছর হয়ে গেল, প্রয়াত হয়েছেন আমাদের দেশের গর্ব, মহান গায়ক কিশোর কুমার। যিনি শুধু গায়ক নয়, একাধারে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকর এবং রেকর্ড প্রযোজক, এতগুলি তকমা একসঙ্গে বয়ে চলেন লেজেন্ড্রারি গায়ক। তবে তবে অধিক পরিচিত ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বাধিক সফল এবং চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক হিসেবে। কিশোর কুমারের জীবনের সঙ্গে চার সংখ্যাটির অদ্ভূত মিল রয়েছে। তাঁর জন্ম ৪ই আগস্ট ভোর ৪টার সময়। তাঁর চারটি বিবাহ এবং ৪ সন্তান। চলচ্চিত্র জীবনেও ৪টি বাংলা এবং ৪ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালয়ালম, ওড়িয়া, এবং উর্দু-সহ কয়েকশো গান। এছাড়াও তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংকলনেও বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন, বিশেষত তার বাংলায় গাওয়া গানগুলি সর্বকালের ধ্রুপদী গান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি ৮ বার শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়কের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন। কিশোর কুমার ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর মারা গিয়েছেন। শুধু দেশ নয়, তাঁর প্রতিভার কদর করে গোটা বিশ্ব। মহান গায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে, একটি ইংরেজী সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে একবার কিশোরের ছেলে অমিত কুমার জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন।
তাঁর অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে অমিত কুমার আরও বলেছিলেন, “আমি একবার টরন্টোতে গোবিন্দ এবং নীলমের সঙ্গে সফরে যাচ্ছিলাম। খুলভূষণ খারবান্দা এবং আশ্রানিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আশ্ররানির সঙ্গে সেটিই ছিল আমাদের শেষ শো, সেদিন আশরানি আমাকে একটি টাকা দিয়ে বাবার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে বলেছিলেন। আসলে সেই সন্ধ্যা ছিল, বাবার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে (12 অক্টোবর, 1987)।” পরের দিন, অমিতের মামাতো ভাই দেব মুখোপাধ্যায় তাঁকে ফোন করে কিশোর কুমারের অসুস্থতার খবর জানান। খবরটি শুনে অমিত ভেঙে পড়েছিলেন সেই সময়। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “দেব কিছু বলতে পারেনি। আমি হঠাৎ বোম্বে থেকে আরও কয়েকটি ফোন পেতে শুরু করি এবং তাঁরা সবাই জিজ্ঞাসা করছিল, ‘অমিত, আপনি কখন বোম্বে ফিরছেন?’ আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু হয়েছে, তখনও জানিনা ঠিক কী হয়েছে! কিন্তু এটি মাত্র কয়েক মিনিট পর আমি শক্তি সামন্তের কাছ থেকে একটি কল পেলাম যেটি আমাকে দুর্ভাগ্যজনক সংবাদ সম্পর্কে জানিয়েছে। এর আগে বাবার দুটি হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।”
পরিচালক শক্তি সামন্তের সঙ্গে আবেগঘন কথা স্মরণ করে অমিত কুমার ব্যাখ্যা করেছেন, “শক্তিদা বলেছিলেন, ‘অমিত, কিশোর আর নেই, তিনি চলে গেছেন’। শক্তিদা’র ডাকের পরই গোবিন্দ, আশরানি এবং ট্যুরের অন্য সবাই আমার কাছে আসতে শুরু করে।” তখনই বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন অমিত কুমার। তিনি আরও জানান, মৃত্যুর আগে, কিশোর কুমার তাঁর পুত্র অমিতকে টরন্টো থেকে কতকগুলি ইংরেজি ছবির ক্যাসেট কিনে আনতে বলেছিলেন। অমিতের কথায়, “বাবা আমাকে টরন্টো থেকে প্রচুর ইংরেজি ছবির ক্যাসেট কিনে আনতে বলেছিলেন। আমি গিয়ে সব কিনেছিলাম। আমার কাছে এখনও সেই ক্যাসেটগুলো আছে। আমার বাবা ছিলেন একজন চলচ্চিত্র প্রেমী। কিন্তু আর সেই ক্যাসেটে ছবি দেখা হল নি কিশোর কুমারের।”