এই মুহূর্তে




অক্সফোর্ডে প্রথম ভাষণেই বাজিমাত মমতার, মোহিত শ্রোতারা




নিজস্ব প্রতিনিধি, অক্সফোর্ড: এ যেন অনেকটাই ‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’। অর্থা‍ৎ ‘এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন’। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) অক্সফোর্ডের  মঞ্চে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন, কেন বঙ্গের বাক-সর্বস্ব রাজনীতিবিদদের চেয়ে তিনি ব্যতিক্রমী। কেন তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ‘পাশের বাড়িটির মেয়ে।’ প্রথমবার বক্তৃতা দিতে এসেই একশোয় একশো নিয়ে ফিরলেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। তাঁকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল। ভাষণের সময়ে আরজি কর কাণ্ডের মতো বিতর্কিত বিষয়ে শ্লোগান তুলে পরিবেশ-পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা চলেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন ষড়যন্ত্রকারীরা। সমবেত দর্শকদের প্রতিরোধ আর প্রতিরোধের মুখে গণপিটুনি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। কেলগ কলেজের ‘দ্য হাব’ প্রেক্ষাগৃহে এদিন ঘন্টাখানেকের ভাষণে নিজের জীবনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পরে কীভাবে আর্থিক দৈন্যতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি আংশিক সময়ের কাজ করতে হয়েছে, তাও উল্লেখ করেন।মমতার সেই লড়াইয়ের কথা মুগ্ধ হয়ে শোনেন প্রেক্ষাগৃহে হাজির দর্শকরা।

বদলে যাওয়া বাংলার গল্প শোনাতে গিয়ে অক্সফোর্ডের মঞ্চে তৃণমূল জমানায় কীভাবে নারীদের ক্ষমতায়নকে পাখির চোখ করা হয়েছে, তাও উল্লেখ করেন মমতা। কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের সুফল ব্যাখ্যা করত গিয়ে বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যা। স্কুল ড্রপ আউট কমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। এটা শূন্যে পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি বেড়েছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা। ৯৯.৯৯ শতাংশ এখন প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব। আগে ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। ’

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারের মহিলা সদস্যদের নামে এই কার্ড ইস্যু করা হয়।’ পশ্চিমবাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডারকে মডেল করেছে ভারতের একাধিক রাজ্য। মেয়েদের আর্থিক সাবলম্বী করতে মাসিক ভাতা দেওয়া শুরু করেছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। লক্ষ্মীর ভান্ডার গড়ার পিছনের গল্প শোনাতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘নোটবন্দির পর মহিলাদের কাঁদতে দেখেছি। ছোট ছোট বিষয়ে স্বামীর কাছে তাদের হাত পাততে হতো। নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই চালু করেছিলাম লক্ষ্মীর ভান্ডার। এখন সব রাজ্য এটা অনুসরণ করছে। গোটা ভারতেই মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগদ টাকার এই সহায়তা যতদিন তাঁরা বাঁচবেন ততদিন পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার পেতে কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি।’

যখন ধর্মের বেওসায়ী রাজনীতিবিদরা ধর্মের বিষ ঢেলে চলেছেন তখন সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের ‘জয়গান’  গেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘বাংলার মাটি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের মাটি। এখানে ভিনরাজ্যের বাসিন্দারা এসে থাকেন, এটাই তাঁদের ঘর হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় তাঁরা কথা বলেন। কেউ বলেন, জল, কেউ ওয়াটার, কেউ আবার পানি। আমি বলি, আমরা ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক – কারও মধ্যে কোনও ভাগ করি না। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে আমাদের সরকার। আমি নিজেকে শুধু মানুষ বলতেই ভালবাসি। একটা কথা জানবেন, ভাগাভাগি করা সহজ, কিন্তু একতা ধরে রাখাটা কঠিন।’

অক্সফোর্ডে বক্তৃতা করতে এদিন সকালেই লন্ডন থেকে বাসে চেপে রওনা হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাসে তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ থেকে বেশ কয়েকজন সফরসঙ্গী। নির্ধারিত সময়ের ঘন্টাখানেক আগেই অক্সফোর্ডে পৌঁছে যান মমতা। হোটেলে খানিক বিশ্রাম নেন। তার পরেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে রওনা করেন। অতিথি মমতাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে দেখালেন কর্তৃপক্ষ। মাঝে বাংলার প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ক্রিকেটের মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। প্রাচীন অক্সফোর্ডের নানা মাইলফলকের সামনে নিয়ে গিয়ে তার ইতিহাস সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন অক্সফোরডের আধিকারিক ও গাইড। শেল্ডনিয়ান থিয়েটার, বডলিয়ান লাইব্রেরির মতো কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ভবনও ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এর পরেই মমতাকে নিয়ে যাওয়া হয় কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহ ‘দ্য হাব’-এ।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে, একবার সামনাসামনি দেখতে কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন অনেক প্রবাসী। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে মমতার বক্তৃতা শোনেন। ভাষণ, প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বাংলার প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। লন্ডনে ফেরার উদ্দেশে যখন মমতা বাসে উঠে পড়েছেন, তখনও বহু মানুষ সেই বাস ঘিরে ছবি তুলছেন।

 




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ভারত ছাড়ার ধুম, কেন্দ্রের দাওয়াইয়ে হাজার হাজার লোক ফিরছেন পাকিস্তানে

প্রকাশিত হল পোপ ফ্রান্সিসের সমাধির ছবি

বেঁচে ফিরেছিলেন মৃত্যুর মুখ থেকে, ৩ কোটিরও বেশি টাকায় বিক্রি হল টাইটানিক যাত্রীর চিঠি  

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি তুঙ্গে, ব্রিকস বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না জয়শঙ্কর-ডোভাল

পহেলগাঁওকাণ্ডের জের, নিয়মের গেরোয় মাকে ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরতে হল একরত্তি শিশুকে

‘১৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র ভারতের দিকে তাক করা’- পহেলগাঁও হামলার পর প্রকাশ্য হুমকি পাক মন্ত্রীর

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর