নিজস্ব প্রতিনিধি: উদ্দেশ্য ছিল বাংলার প্রশাসনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলিটা চালানোর। কিন্তু তাতে রাজী হননি জেলা শাসকেরা(District Magistrates)। তাঁরা বেঁকে বসতেই সব কিছু চলে যায় ঠান্ডা ঘরে। একই সঙ্গে বাংলার(Bengal) প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার তালিকাতে উজ্জ্বলা যোজনায়(Ujjwala Scheme) বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার ঘটনাও জুড়ে গিয়েছে। যখন প্রথম দিকে কেন্দ্র সরকার উজ্জ্বলা যোজনা চালু করে তখন ঠিক করা হয়েছিল, বিপিএল তালিকাভুক্তদেরই(Listed in BPL) এই সংযোগ দেওয়া হবে। পরে সেই শর্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্র। পরিবর্তে দেওয়া হয় নয়া শর্ত। মোদি সরকারের(Modi Government) সেই নয়া শর্তে বলা হয়, প্রকল্পের অংশিদার হতে হবে রাজ্য সরকারকেও। সেই সঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি জেলার জন্য জেলা শাসকের নেতৃত্বে গঠিত করতে হবে একটি কমিটি। এই কমিটিই দেখবে কারা উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার যোগ্য আর কারা নন। আর এই কমিটি নিয়েই যাবতীয় বিরোধ। নিট রেজাল্ট বাংলার প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত।
বিরোধ কোথায়? কেন্দ্রের শর্ত ছিল জেলাস্তরে যে কমিটি গড়ে তোলা হবে সেখানে জেলা শাসককে মাথায় রাখলেও সেখানে ঠাঁই দিতে হবে গ্যাস বা তেল সংস্থার কর্তাদের পাশাপাশি সমাজের ‘মান্যগণ্য’-দের। এই মান্যগণ্য কারা? যারা আদতে বিজেপি ঘনিষ্ঠ। আর সেখানেই আপত্তি জানান জেলা শাসকেরা। তাঁদের দাবি, যে ভাবে কমিটি করা হচ্ছে তাতে পরবর্তীকালে এই প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে বাধ্য। আর তখন ফাঁসবেন তাঁরাই। তাঁদের কার্যত কমিটিতে রাখাই হয়েছে ‘সই’ করানোর জন্য। বাকি সব কিছুই ঠিক করার ক্ষমতা দেওয়ায় হয়েছে ওই বিজেপি ঘনিষ্ঠদের। ফলে প্রকৃত বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষেরা ওই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন। লাভবান হবেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকেরা।
এরপরেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্প থেকে সরে আসে। এখন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, কেন্দ্র সরকার গত বছর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছিল ৭৫ লক্ষ পরিবারে বিনা পয়সায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। এখন বাংলাকে বাদ দিয়েই ৭৩ লক্ষের লক্ষ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, বাংলা বঞ্চিত হলেও কেন্দ্রের টার্গেট পূরণে কোনও সমস্যা হবে না। তাই কেন্দ্রের তরফে কার্যত জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাকে নিয়ে আর না চিন্তা করলেও চলবে। এই আবহে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশ মনে করছে, এ রাজ্যে উজ্জ্বলার ভবিষ্যৎ আপাতত অন্ধকার। বাংলার যে ১৪ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা বঞ্চিতদের দলেই থেকে গেলেন।