নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে যারা পদ্মপার্টির প্রার্থী হয়ে জিতেছেন সেই সব বিধায়কেরা যে দলের প্রতি দায়বদ্ধ এমন কথা জোর গলায় বলার মতো অবস্থায় নেই বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) কোনও নেতাই। কেননা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিজেপি বিধায়ক বেসুরো হয়েছেন। তাঁরা খাতায় কলমে বিজেপির বিধায়ক থাকলেও আদতে বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও বন্ধ করে দিয়েছেন। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই এই সব বেসুরো বিধায়কদের ওপর। আর এই জায়গা থেকেই আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে পদ্মপার্টির। আর সেই আশঙ্কার নেপথ্যে শিওরে এসে দাঁড়ানো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন(Presidential Election)। কেননা অনুমান করা হচ্ছে এই নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির একাধিক বিধায়ক ক্রশ ভোটিং ঘটাতে পারেন। আর সেই আশঙ্কা থেকেই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কার্যত রাতের ঘুম ছুটেছে। আর তাই ক্রশ ভোটিং(Cross Voting) ঠেকাতে বাংলায় দলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত সব বিধায়ককে ভোটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে আগামী ১৭ জুলাইয়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির থাকতে এবার হুইপ জারি করল পদ্মপার্টি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ৭৭জন বিজেপি বিধায়ক জয়ী হন। কিন্তু জয়ের পরে পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও সাংসদ জগন্নাথ সরকার তাঁদের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। তখনই বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা নেমে আসে ৭৫। পরবর্তীকালে আরও জনা ৫ বিধায়ক বেসুরো হয়েছেন। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস তেমনি আছেন তন্ময় ঘোষ, সৌমেন রায়রাও। এদের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কার্যত কোনও যোগাযোগই আর অবশিষ্ট নেই। আবার অর্জুন সিংয়ের ছেলে পবন সিংয়ের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির সে অর্থে আর কোনও যোগাযোগ নেই। সেই হিসাবে বিজেপির হাতে এখন বিধায়ক রয়েছেন ৬৯। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কেননা গত মঙ্গলবার কলকাতার(Kolkata) বেসরকারি বিলাসবহুল হোটেলে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর(Draupadi Murmu) সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের। কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকজন বিধায়ক–সাংসদ অনুপস্থিত ছিলেন। আর এখানেই ক্রশ ভোটিংয়ের অনুমান আরও জোরদার হয়েছে।
এবারে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে কোনও রাজনৈতিক দলই তাঁদের সাংসদ ও বিধায়কদের ওপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কোনও হুইপ জারি করতে পারবে না। অর্থাৎ দলগুলি তাঁদের সাংসদ ও বিধায়কদের ওপর কোনও হুইপ জারি করে বলতে পারবে না যে নির্দিষ্ট কোনও প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। আর এই জায়গাতেই চিন্তা বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের। কেননা দলের সাংসদ বিধায়ক থেকে শুরু করে দলের নেতাদের ওপরেও যে বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণ যে দলের রাজ্য নেতৃত্বের নেই সেটা অনেক আগেই সামনে চলে এসেছে। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রশ ভোটিং ঠেকাতে শেষে অন্য পথে হাঁটা দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা দলীয় বিধায়কদের ওপর হুইপ জারি করেছে আগামী ১৭ জুলাই কলকাতায় দলের প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির থাকতে। এর পিছনে কারণ হিসাবে বিজেপি নেতাদের দাবি, রাজ্য বিধানসভার অনেক সদস্যই নতুন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের নেই। সেই জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোট নষ্ট ঠেকাতেই আগামী রবিবার নিজাম প্যালেসে হবে প্রশিক্ষণ শিবির। সেই শিবিরে যাতে দলের সব বিধায়ক হাজির থাকেন সেই জন্যই হুইপ জারি হয়েছে। এই হুইপ লঙ্ঘণ করলে দলীয় বিধায়কদের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও এই হুইপ জারি করে বা প্রশিক্ষণ দিয়েও ক্রশ ভোটিং ঠেকানো যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।