নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol) ভর্তি রয়েছেন কলকাতার এসএসকেএম হাসাপাতালে(SSKM Hospital)। যদিও বুধবারই তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল নিজাম প্যালেসে(Nijam Palace) সিবিআইয়ের(CBI) কার্যালয়ে। সেখানে গরু পাচার মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। কিন্তু নিজাম প্যালেসে হাজিরা না দিয়ে অনুব্রত সোজা হাজির হন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে ভর্তিও হয়ে যান তিনি। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় কী করণীয় তা জানতেই এখন দিল্লিমুখো হয়ে বসে আছে কলকাতায় থাকা সিবিআই-য়ের আধিকারিকেরা। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করবেন নাকি তাঁকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করাবেন সেটা জানতেই সিবিআই আধিকারিকেরা দিল্লির কেন্দ্রীয় সিবিআই নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষা করছেন।
সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার কখন কোন কোন পরিস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডল কী কী করেছেন তার বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠিয়েছেন কলকাতার সিবিআই আধিকারিকেরা। একই সঙ্গে তাঁরা লিগাল সেলের পরামর্শও নিচ্ছেন যে এখন ঠিক কোন পদক্ষেপ করা যেতে পারে তা নিয়ে। কেননা বুধবার রাতে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে যান অনুব্রত মণ্ডলের দুই আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা ও সঞ্জীব কুমার দাঁ। তাঁরা সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়ে দেন, নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতেই কলকাতায় এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু বুধবার ভোর রাত থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। সেই সঙ্গে একাধিক শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে থাকে। তার জেরেই এসএসকেএম হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। একইসঙ্গে তাঁরা সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মণ্ডলের লেখা একটি চিঠিও তুলে দেন। সেই চিঠিতে অনুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতার কারণে হাজিরা দিতে পারছি না। তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সিবিআই চাইলে হাসপাতালে আসতে পারে। আমি সব রকম সহযোগিতা করব। সিবিআই হাসপাতালে আসতে না চাইলে আমাকে ৪ সপ্তাহ সময় দিক। আমি সুস্থ হয়ে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেব।’
সেই চিঠি দিয়ে নিজাম প্যালেস থেকে বার হওয়ার মুখে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীরা আবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘অনুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থা একদমই ভালো নয়। তদন্তের নামে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাতেই অসুস্থ। এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত। এটা রাজনৈতিক পরিভাষা নিয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সিবিআই দফতরে যেতে পারেননি অনুব্রত। আসার প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন। বোলপুর থেকে এসেছিলেন কেবল নোটিসেই সাড়া দেওয়ার জন্য। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।’ এদিন কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালের তরফে সেখানকার সুপার পীযূষ রায় এক চাঞ্চল্যকর বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘অনুব্রত মণ্ডলের চিকিৎসার জন্য সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড(Medical Board) গঠন করা হয়েছে। সেই বোর্ড এদিন একটিও বৈঠক করেছে। মূলত অনুব্রতবাবুর ঠিক কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে আর তার চিকিৎসা কোন পথে হবে সেটা ঠিক করতেই এই বৈঠক হয়েছে। আগামিকালও আবার বৈঠক হবে। ওনার অক্সিজেন নির্ভরশীলতা কিছুটা কমলেও প্যালপিটেশন কমেনি। এই অবস্থায় বাড়িতে তাঁর চিকিত্সা সম্ভব, না কি হাসপাতালে রেখে চিকিত্সা করতে হবে, সেই বিষয়টি নিয়েই এদিন আলোচনা হয়েছে। ওনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সামান্য কম রয়েছে, সুগারও রয়েছে। তাই সুগারের মাপকাঠির ওপরেও বেশি নজর রাখা হয়েছে। তবে দেশের সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমাদের সঙ্গে সিবিআই যোগাযোগ করলে আমরা আইন মেনে তদন্তে যেভাবে সাহায্য দরকার করব।’ আর এই বিবৃতিতেই পরিষ্কার সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করাতে চাইলে এসএসককেএম কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা দেবে না। আর সিবিআই আধিকারিকেরা এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নেবে কী নেবে না সেটা নিয়ে দিল্লির কর্তারা কী ভাবছেন সেটাই দিকেই তাকিয়ে কলকাতার সিবিআই আধিকারিকেরা।