নিজস্ব প্রতিনিধি: অন্ধ মমতা বিরোধিতার পথে হাঁটায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনার মুখে বঙ্গ সিপিএম। রাজ্য সরকারের একাধিক দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে সরব হতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই টার্গেট করছেন সেলিম-সুজনরা। সূত্রের খবর, এই বিষয়টি নিয়েই বঙ্গ সিপিএমকে সতর্ক করল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতির অভিযোগে ইডি সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে যা নিয়ে ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। কিন্তু, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গ সিপিএম অন্ধ মমতা বিরোধিতায় মগ্ন হয়েছে। যা নিয়ে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সিপিএম নেতাদের সতর্ক করেছে দলের শীর্ষ নেতারা। অন্ধ মমতা বিরোধিতার পথে না হাঁটার জন্য রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর পথে নেমে আন্দোলন করেছে সিপিএম। ‘চোর ধরো জেল ভরো’ স্লোগানে ভর করে পথে নেমেছে বঙ্গ বিজেপিও। একই স্লোগান নিয়ে পথে নেমে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে সিপিএমও। যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম কেন বিজেপির স্লোগান নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। স্লোগানে লাল ও গেরুয়া শিবিরের মিলে যাওয়া কেবল কাকতালীয় নাকি পরিকল্পিত, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজের ফেসবুক পোস্টে মহাজোটের ডাক দিয়েছিলেন। সুকান্ত বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করতে কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপির মহাজোট হওয়া দরকার। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এমনিতেই গেরুয়া শিবিরের নেতা ও সিপিএমের নেতারা টিভি চ্যানেলগুলিতে গিয়ে একসুরে কথা বলেন। দুই দলই অন্ধ মমতা বিরোধিতা করে চলেছে। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য দুধের দাম বাড়িয়েছে, রান্নার গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পথে নেমে আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না সিপিএমকে। এ বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গ সিপিএমের ভূমিকায়। তবে মমতা বিরোধিতায় দলের ছাত্র-যুব নেতারা যতটা সরব, এমনকী সেলিম-সুজনরাও যতটা তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরোধিতায় খড়গহস্ত হন সেই তুলনায় দলের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু বা সূর্যকান্ত মিশ্রদের মুখে ততটা মমতার সমালোচনা শোনা যায় না। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। পালটা বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএমের একাধিক নেতারও সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। বঙ্গ সিপিএম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে সরব হলেও বিজেপির নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে নীরব। তবে আজাদ হিন্দ মঞ্চ নামে এক সংগঠন বিজেপি নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে কলকাতায় প্রদর্শনী করে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবে। একইসঙ্গে ওই সংগঠন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রদর্শনী করবে বলে জানিয়েছে। তবে বাংলার অন্যতম বামপন্থী দল সিপিএম কেন বিষয়টিকে নিয়ে ময়দানে নামল না, সেই প্রশ্ন উঠছে আলিমুদ্দিনের অভ্যন্তরেই।