নিজস্ব প্রতিনিধি: শনি সন্ধ্যায় লাগা আগুন(Fire) বহাল তবিয়তে দৌড়াচ্ছে রবি সকালেও। এখনও সেখানে পকেট ফায়ার রয়ে গিয়েছে যা নেভাতে কার্যত হিমসিম খাচ্ছেন দমকলের কর্মীরা। কিন্তু তার থেকেও উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় মানুষের আচরণ। রবি ভোরেই তাঁরা মারমুখো হয়ে চড়াও হন দমকর্মীদের ওপরে। রড, লাঠি, বাঁশ, ইট নিয়ে তাঁরা চড়াও হন দমকলকর্মীদের ওপরে। কলকাতায়(Kolkata) শনি সন্ধ্যাতেই ট্যাংরার(Tangra) তিন নম্বর মেহের আলি লেনের গুদামে(Godown) আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলের ৩জন কর্মী আহত হন। রবি ভোরে আরও ৩জন দমকল কর্মী আক্রান্ত হন স্থানীয় মানুষজনদের হামলায়(Attack)।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবল তাপে প্রায় ৩০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ওই গুদামের পাঁচিলের বিভিন্ন অংশ বেঁকে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তা ভেঙে পড়তেও শুরু করে দিয়েছে। গতকাল রাতেই গুদামের মূল পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। এদিন সকালে দমকলের কর্মীরা সেই ভেঙে পড়া অংশ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু প্রায় দু’তলা বাড়ির সমান উচ্চতার পাঁচিল যে কোনও মুহুর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকায় তাঁরাও খুব দ্রুত কাজ সারতে পারছেন না। তার মধ্যেই জায়গায় জায়গায় রয়ে গিয়েছে পকেট ফায়ার। গুদামটির আশেপাশে ঘিঞ্জি এলাকা থাকায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন দমকলের আধিকারিকেরা। রাতেই গুদামের আশেপাশের বাড়িগুলির বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ক্লাব ও মাদ্রাসায়। রাতেই এলেকার পরিস্থিতি নিয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর কাছ থেকে খবরাখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কারও মারা যাওয়ার কোনও খবর নেই। গুদামে কেউ আটকে আছেন এমন সম্ভাবনাও নেই। তবে গোতা এলাকা এখনও ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলের কর্মীরা। তবে তার মধ্যেই সামনে এসেছে ওই গুদামে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। শুধু তাই নয়, গুদামে রীতিমত দাহ্যবস্তু রেখে দেওয়া হয়েছিল।
দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থগুলি সম্পূর্ণ পুরে না যাওয়া অবধি নেভানো যাবে না এই পকেট ফায়ার। এর অন্যতম আরেকটি কারণ হল আগুনের উৎসমুখ অবধি পৌছাচ্ছেনা জল। ভাঙা টিনের শেডের নিছে রয়েছে আগুনের উৎস। এলাকার দেওালের ভেতরে ঢুকে নির্দিষ্ট ফায়ার পকেটে সরাসরি জল না দেওয়া হলে এগুলি নেভানো সম্ভব নয়। এলাকায় গলি অত্যন্ত সরু হওয়ায় দমকলের মাত্রও ৫টি গাড়ি একদম কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে। আরও ৩টি গাড়ি একটু দূরে ব্যাকআপ হিসেবে রয়েছে। আসেপাসের এলাকায় বিভিন্ন গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও ১২টি ইঞ্জিন। ঘটনাস্থলের আশেপাশের ৩টি বাড়ি বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও খালি করে দেওয়া এই বাড় গুলি এই মুহূর্তে কী অবস্থায় রয়েছে তা বিশেষজ্ঞরা না এলে বোঝা সম্ভব নয়। তবে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ির বাসিন্দাদের এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ ওই ৩-৪টি বাড়ির যা অবস্থা তাতে এই সেখানে থাকা সম্ভব নয়। ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা সবরকম নাগরিক পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতেই বেশ কিছু আধিকারিকের আসার কথা রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সূত্রের দাবি, ওই সব বাড়ির বাসিন্দারেই এদিন ভোরে দমকলকর্মীদের ওপর চড়াও হন।
তবে দমকলকর্মীদের সব থেকে বেশি চিন্তা এখন গুদামের পাঁচিল নিয়ে। কেননা তা রীতিমতো বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দু’তলা বাড়ির উচ্চতার সমান ওই দেওয়ালের কোনও পিলার নেই। প্রবল তাপে ইতিমধ্যে পাঁচিলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরা হয়েছে। তা যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিন দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, আগুন না নিভলে পরিকাঠামোয় জল ঢেলে ঠাণ্ডা করার কাজ শুরু করা যাবে না। আর সেই ঠাণ্ডা করার কাজ শেষ হলে তবেই পাঁচিল ভাঙার কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু তার আগেই যদি পাঁচিল ভেঙে পড়ে সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকবে না। তাই আপাতত পাঁচিল থেকেই সবাইকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। দমকলের আধিকারিকেরা এদিন এটাও জানিয়েছেন, গুদামে প্রচুর রাসায়নিক, ফোমের মতো দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। ওই অবস্থাতেই ওয়েলডিংয়ের কাজ করা হচ্ছিল। আর সেই সময়েই সম্ভবত আগুন লেগেছে।