নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে মা দুগ্গা জলে পড়লে বাঙালির মুখে আর ইলিশ রোচে না। তাই দুগ্গাপুজো পার হলেই বাজারে দাম কমে যেত ইলিশের। সেভাবে তার তখন আর দেখা মিলতোও না। তবে লক্ষ্মীপুজো ও সরস্বতী পুজোয় জোড়া ইলিশের চল এখনও রয়েছে। কিন্তু ভরা হেমন্তে ইলিশ! এমন কথা কিন্তু চট করে শোনা যেত না আগে। এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত ধরেই তাই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাজারে মিলছে ইলিশ। আর সেটাও মিলছে অনেকটাই কম দামে। বিক্রিও হচ্ছে ভাল। খেতে যে খুব খারাপ কিছু এমনও নয়। হঠাৎ করে বাজারে এই ইলিশের আবির্ভাবের মূলে যেমন কাজ করছে জলবায়ুর পরিবর্তন তেমনি কাজ করছে সাগরে দানা বাঁধা নিম্নচাপও। ঘন ঘন নিম্নচাপের জেরে সাগরের বুকে পুবালি হাওয়া যেমন বেড়েছে তেমনি সেই হাওয়ায় ভর দিয়ে সাগর থেকে ফের নদীর মিষ্টি জলে পাড়ি জমাচ্ছে ইলিশের দল। আর তার জেরেই এখন দিঘার মতো এলাকায় নিত্যদিন মিলছে প্রায় ১ টন করে ইলিশ।
দিঘায় এখন যে ইলিশ উঠছে তার চেহারা কিন্তু খারাপ নয়। ৬০০-৭০০ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড় কেজি ওজনেরও ইলিশের দেখা মিলছে। কেজি প্রতি কোথাও ৩০০ বা কোথাও ৫০০ টাকা দরে তা বিক্রি হচ্ছে। আর তার জেরে বাঙালির পাতে এখন ফিরেছে বেগুন ইলিশ, কালো জিরে দিয়ে ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, ইলিশের ঝোলের মতো পদ। কলকাতা সহ আশেপাশের বাজারে যে ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে তা মূলত আসছে দিঘা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার থেকে। চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কলকাতার বুকে মানিকতলার পাশাপাশি উল্টোডাঙা, কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট-সহ শহরের বিভিন্ন বাজারে গত দু’দিন ধরে ইলিশের দেখা মিলছে, বিক্রিও বেশ ভালই হচ্ছে! আর যারা সেই ইলিশ কিনছেন তাঁরা জানাচ্ছেন স্বাদেও বর্ষার ইলিশকে হার মানাচ্ছে হেমন্তের ইলিশ।
‘দিঘা ফিশারম্যান ও ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের জানিয়েছেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে রোজ গড়ে এক টন করে ইলিশ উঠছে দিঘার সমুদ্র থেকে। এই সময়ে এত ইলিশ আগে দেখা যায়নি।’ আবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি জানাচ্ছেন, দিঘার তুলনায় গত দু’দিনে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার, রায়দীঘি থেকে বেশি ইলিশ উঠছে। গত তিন দিনে এই সমস্ত এলাকা থেকে সব মিলিয়ে প্রায় সত্তর টন ইলিশ উঠেছে। বেশিরভাগের ওজন পাঁচশো থেকে সাতশো গ্রাম। স্বাদেও হার মানাচ্ছে বর্ষার ইলিশকে। দামের দিক থেকেও বর্ষার ইলিশের অতুলনায় দামে কম, স্বাদে বেশি। তাই বিক্রিও হচ্ছে বেশি পরিমাণে। কিন্তু এই অসময়ে ইলিশের দেখা মিলছে কেন?
কেন্দ্রীয় মৎস্যশিক্ষা সংস্থার (কলকাতা কেন্দ্র) বিজ্ঞানী গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের দাবি, আবহাওয়ার পরিবর্তনই রুপালি শস্যের আচমকা আমদানির অন্যতম কারণ। তাঁর দাবি, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্যই অসময়ে ইলিশের দেখা মিলছে। পরিযায়ী শ্রেণির ইলিশ জলে তার গতিপথ পরিবর্তন করায় এই অসময়ে ইলিশ উঠছে মৎস্যজীবীদের জালে। এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ইলিশের ঝাঁক অপেক্ষাকৃত লবণাক্ত জায়গার দিকে সরে এসে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঠাঁই নিয়েছে। তবে এই অসময়ে ইলিশ পাওয়ার আরেকটা কারন হতে পারে রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে যে পরিমাণ ছোট ইলিশ ছিল তারাই বড় হয়েছে। ডিম ছেড়ে যাওয়ার সময়ে ধরা পড়েছে।’