নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে রাজ্য ব্যবস্থা করেছে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, মৃত্যুর পরে জীবনের বিকল্প অর্থ বা বাড়ি বা চাকরি নয়। তবু বেঁচে থাকতে কিছু জিনিস লাগেই। তাই মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। মৃতদের পরিবারপিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ এখনও চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শেষকৃত্য নিয়ে বেশ কিছু আর্থিক তছরুপ চোখে পড়েছে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Corporation)। অন্তত এমন্টাই অভিযোগ। করোনায় মৃত্যুর নামে সৎকার করা হয়েছে স্বাভাবিক ভাবে মৃতের দেহ। সৎকার কর্মীদের অর্থ সংক্রান্ত লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখতে গিয়েই চোখে পড়েছে এই কেলেঙ্কারি। মোটা অঙ্কের টাকার হিসেবে বেনিয়ম চোখে পড়েছে কলকাতা পুরসভার। তা রুখতেই শুরু হয়েছে তদন্ত। বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মেয়র (Mayor) ফিরহাদ হাকিম।
জানা গিয়েছে, এই বিষয় প্রথমে লক্ষ্য করে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের। অতিমারির সময়ে প্রত্যেক আক্রান্তের মৃতদেহের অগ্নি সৎকার বা কবর দেওয়ার জন্য নিযুক্ত সৎকার কর্মীদের তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হত। পরে সেই অর্থ কমিয়ে করা হয় দেড় হাজার টাকা।
অভিযোগ, অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই বেনিয়ম বেশি দেখা গিয়েছে পূর্ব কলকাতার একটি সৎকার কেন্দ্রে। তথ্য অনুযায়ী, অতিমারির সময়ে ২ বছরের মধ্যে প্রায় ৪০০টি কোভিড (Corona) মৃতদেহের শেষকৃত্য করা হয়েছে। কিন্তু তা দেখানো হয়নি খাতায় কলমে। বেশি অর্থের লোভে পুরসভায় ১৪০০টি করোনা দেহ সৎকারের খরচ দেখিয়ে বিল জমা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা মিটিয়েও দিয়েছে। তবে এই ‘ঠকানো’ নজরে আসতেই পুরসভার অডিটরকে দিয়ে অডিট করানো হচ্ছে, বলে খবর।
জানা গিয়েছে, হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার পর সৎকারের সময় তা জমা রাখতে হয় কবর বা শ্মশানে। তা দেখে পুরসভা থেকে ইস্যু করা হয় মৃত্যু শংসাপত্র। দেখা গিয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে সেখানে সেই শংসাপত্রের ওপর করোনা লিখে দেওয়া হয়েছে। আর তারপর তা জমা দেওয়া হয়েছে পুরসভায়। করোনার (Covid 19) ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য থাকে বিশেষ স্ট্যাম্প কিন্তু ভুয়ো শংসাপত্রে তা নেই। ফলে ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে পুরসভাকে। তাই হাসপাতাল ধরে ধরে মৃত্যুর তথ্য যাচাই করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা। আরও জানা গিয়েছে, বিশেষ ওই সৎকার কেন্দ্রের রেজিস্ট্রার ও তাঁর সহযোগীর সঙ্গে কথা বলছেন আধিকারিকরা। জোর দেওয়া হয়েছে ‘মিলিয়ে দেখা’য়। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্ত চলছে। পুরসভার টাকা বা যোগ্য প্রাপকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া গুরুতর অপরাধ। দোষীরা শীঘ্রই ধরা পড়বে। নেওয়া হবে উপযুক্ত ব্যবস্থা।