নিজস্ব প্রতিনিধি: কোনও সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষার রিপোর্ট নয়। কোনও বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষার রিপোর্টও নয়। এমনকি নয় কোনও ভিন দেশী সংস্থার রিপোর্ট। এই রিপোর্ট খোদ নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকারের হাতে জন্ম নেওয়া নীতি আয়োগের(Niti Aayog)। আর সেই নীতি আয়োগের রিপোর্টই এখন মুখ পোড়াচ্ছে বিজেপির(BJP)। সেটাও দেশজুড়ে। আবার এই রিপোর্টই বলছে ভাল আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাংলা(Bengal)। বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচকের নিরিখে বা Multidimensional Poverty Index বা MPI’র হিসাবে দেখা যাচ্ছে দেশের মধ্যে যে সব রাজ্যে গরিবির হার ১০ শতাংশের বেশি, সেই সব রাজ্যের মধ্যে ৮টি রাজ্যই বিজেপি শাসিত রাজ্য। যা কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘গরিবি হটাও’-র স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। তাঁর সরকারের সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে দেশের মধ্যে সব থেকে দ্রুত গতিতে দারিদ্রতা কমছে বাংলার বুকে।
আরও পড়ুন মমতার দেখানো পথে হেঁটেই দেশে রূপায়িত হবে ‘মিষ্টি’
নীতি আয়োগের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে দেশের যে সব রাজ্যে ১০ শতাংশের বেশি দারিদ্রতা রয়েছে সেই সব রাজ্যের মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নত জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত ১০ শতাংশের বেশি মানুষ। আর এই রিপোর্ট কিন্তু এটাই বলে দিচ্ছে বিজেপির হাত ধরেছে যে সব রাজ্য সেগুলিই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে গরিভি হটাওয়ের লক্ষ্যে। অন্যদিকে এটাও স্পষ্ট যে দেশ থেকে দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য এসেছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব অবিজেপি দল শাসিত রাজ্যগুলির। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান—এই তিনটি বিষয় মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতিটি রাজ্যে দারিদ্রের হার নির্ণয় করে নীতি আয়োগ। একেই বলা হয় MPI। পুষ্টি, স্কুলে উপস্থিতি, শিশু ও কিশোরের মৃত্যুহার, খাদ্য প্রস্তুতির জন্য জ্বালানি, স্বচ্ছতা, পানীয় জল সরবারহ, বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ১২টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এই সমীক্ষায়। সরকারি নীতি নির্ধারনের ক্ষেত্রে এই সূচক গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই রিপোর্টই এখন বড়সড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের কাছে।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ সত্ত্বেও ৮টি কোর্স চালুর অনুমোদন পেল না কলেজ
নীতি আয়োগের সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেশের মধ্যে সর্বাধিক দারিদ্র রয়েছে বিহারে। সেখানকার ৩৩.৭৬ শতাংশ মানুষই গরিব। তারপর রয়েছে ঝড়খণ্ড। সেখানকার ২৮.৮১ শতাংশ মানুষ গরিব। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মেঘালয়ে দরিদ্র মানুষ রয়েছেন ২৭.৭৯ শতাংশ। বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এই সংখ্যাটা ২২.৯৩ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ২০.৬৩ শতাংশ, অসমে ১৯.৩৫ শতাংশ, ত্রিপুরায় ১৩.১১ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ১৫.৪৩ শতাং, অরুণাচল প্রদেশে ১৩.৭৬ শতাংশ। একই সঙ্গে রিপোর্ট বলছে বাংলার বুকে দারিদ্রের হার ২০১৯ সালে ছিল ২১.২৯ শতাংশ। ২০২১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১১.৮৯ শতাংশে। অর্থাৎ মাত্র ২ বছরে বাংলার বুকে দারিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে ১০ শতাংশ যা গোটা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি। আর এই দারিদ্রতা কমার পিছনে উঠে আসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা গুচ্ছের আর্থসামাজিক নীতি এবং গ্রাম বাংলার মুখে লাখো লাখো স্বনির্ভর গোষ্ঠী যা শুধু মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতাই বাড়ায়নি, গ্রাম বাংলার অর্থনীতিকেও বদলে দিয়েছে। সারা রাজ্যে দারিদ্রতা কমাতে সহায়ক হয়ে উঠেছে।