নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) পরবর্তী রাজ্যপাল(Governor) কে হবেন তা নিয়ে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে জল্পনার অবসান ঘটছে না। বরঞ্চ তা নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে। জগদীপ ধনখড়(Jagdeep Dhankar) রবিবার রাতেই ইস্তফা দিয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল পদ থেকে। তিনি এখন এনডিএ শিবিরের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। তাঁর জায়গায় বাংলার রাজ্যপালের অস্থায়ী দায়িত্ব এসেছেন মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন। কিন্তু প্রশ্ন আর আগ্রহটা থেকেই গিয়েছে। বাংলার রাজভবনের(Raj Bhawan) স্থায়ী বাসিন্দা কে হবেন? সেই প্রশ্নেই দুটি নাম আগেই ভেসে উঠেছিল, মুক্তার আব্বাস নকভি এবং শিশির অধিকারী। এবার ভেসে উঠল তৃতীয় নাম। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য রঞ্জন গগৈ(Ranjan Gogoi)। নয়া দিল্লির সাউথ ব্লক থেকে নর্থ ব্লক আপাতত এই নামটিকে ঘিরেই এখন জোর জল্পনা চলছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জগদীপ ধনখড় যেভাবে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে প্রতি পদে পদে চেপে ধরতেন সেই রকমই কোনঅ ব্যক্তিত্বকে তাঁরা বাংলার রাজ্যপাল পদে চাইছেন। কিন্তু ধনখড় কার্যত রাজভবনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ককে বিষিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতি মুহুর্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী, শাসক দলের বিরুদ্ধে টুইট করে করে পরিস্থিতি চূড়ান্ত জটিল করে দিয়েছিলেন। কথায় কথায় রাজ্যের সচিব, আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের হুমকি ধমকি প্রদান করে চূড়ান্ত নিন্দনীয় কাজ করে গিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন ধনখড় বিজেপি কথায় উঠে বসে চলে কার্যত রাজ্যপাল পদের গরিমা চূড়ান্তভাবে নষ্ট করে গিয়েছেন। এখন বিজেপি তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী করলেও তাঁরা এই দ্বন্দ্ব চালিয়ে যেতে চাইছেন না। কারণ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এটা বুঝেছেন যে ধনখড় যেভাবে বাংলায় ছড়ি ঘুরিয়ে গিয়েছেন তাতে বিজেপির লাভ অপেক্ষা ক্ষতি বেশি হয়েছে। তাই তাঁরা চাইছেন, এমন কোনও আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞকে যিনি সাংবিধানিক গরিমা অক্ষুণ্ণ রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চেপে ধরতে পারবেন। নকভি ও শিশির এই কাজ পারবেন না বলে তাঁরা আপাতত দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন। সেই জায়গায় উঠে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ রঞ্জন গগৈ-এর নামই ভেসে উঠল কেন? দেশে কী আর বিজেপির বিশ্বস্ত কোনও আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ নেই? সূত্রে জানা গিয়েছে, রঞ্জন গগৈয়ের নাম উঠে আসার মূলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর দেওয়া দুটি মামলার রায় যা তাঁকে মোদির(Narendra Modi) বিশ্বস্ত করে তুলেছে। একটি অবশ্যই রামমন্দির সংক্রান্ত রায় এবং অপরটি নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত রায়। আরএসএস ও বিজেপির এই জোড়া কর্মসূচির ঘোরতর বিরোধী তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই গগৈ বাংলার রাজ্যপাল হয়ে এলে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মতুয়াদের কাছে যেমন বড় বার্তা যাবে তেমনি সংখ্যালঘু সমাজকেও কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া যাবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তাও কিছুটা কমবে বলেই অনেকের ধারনা। বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে দার্জিলিংয়ে জগদীপ ধনখড়ের উপস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সেখানেই তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরবর্তী রাজ্যপাল হিসেবে রঞ্জন গগৈয়ের নাম প্রস্তাব করেন। হিমন্তের প্রস্তাবে চূড়ান্ত মতামত না দিলেও এব্যাপারে খুব একটা নারাজও হননি মমতা। এখন দেখার বিষয় মোদি সরকার চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়।