নিজস্ব প্রতিনিধি: আবারও তীব্র সংঘাত বেঁধেছে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের। নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা(Pradhan Mantri Gram Sadak Yojana) প্রকল্প। কেননা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার নয়া ফরমান জারি করেছে, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলায় ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। তবে এই নিয়ে শুধু যে মমতার সরকারই আপত্তি তুলেছে তাই নয়, আপত্তি জানিয়েছে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকারগুলিও। কেন্দ্র নয়া ফরমানে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দিকে যে সব পাকা রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তার পরিকল্পনা থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত প্রত্যেক পর্যায়ে সাংসদের(Member of Parliament) অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই নয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। শুধু তাই নয়, এই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে বলে সম্প্রতি দেশের সবকটি রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে এ রাজ্যের সরকার।
আরও পড়ুন বানভাসি উত্তরবঙ্গে বিশেষ টিম পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, জানালেন ট্যুইটে
রাজ্যের আপত্তি কোথায়? নবান্নের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে রাজ্যের অংশীদারি রয়েছে। তাই এই কাজের ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কেন্দ্র একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তা ছাড়া, সাংসদরাই একমাত্র জনপ্রতিনিধি নন। গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে এলাকার নির্বাচিত বিধায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যরাও জনপ্রতিনিধি। তাই তাঁদের মতামত নেওয়াও উচিত। অথচ কেন্দ্রের চিঠিতে শুধুমাত্র সাংসদদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। রাজ্যের আপত্তি মূলত তা নিয়েই। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অমিত শুক্লার সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা গ্রাম সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে সাংসদদের কাছ থেকে অনুমতি নিতেই হবে। গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে কোনও রাস্তা তৈরি হলেও, তা কোন কোন জায়গার ওপর দিয়ে যাবে, সেটা ঠিক করার ক্ষেত্রে সাংসদদের সঙ্গে পরামর্শ করতেই হবে।
আরও পড়ুন বঙ্গে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন, SSKM-কে ট্যুইটে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
কেন্দ্রের পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে কত রাস্তা তৈরি হবে, সেই তালিকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অগ্রাধিকার তালিকা বানিয়ে কোন রাস্তা আগে, কোনটা পরে হবে, সে সব নির্দিষ্ট করতে হবে। এই তালিকা তৈরির আগেও সাংসদদের অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি এই ব্যাপারে সাংসদ কোনও পরামর্শ দিলে তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। সাংসদের প্রস্তাব বিবেচিত না হওয়ার যুক্তিটা ঠিক কী, সেটা রেকর্ড করে রাখতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংসদের দেওয়া প্রস্তাব ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে State Level Standing Committee। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় কোনও রাস্তা তৈরি হলে তার উদ্বোধন বা শিলান্যাস অনুষ্ঠানেও বাধ্যতামূলক ভাবে সাংসদকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
আরও পড়ুন নেই পুরো ভরসা, বঙ্গ বিজেপিতে বিস্তারকরাই একমাত্র আশা
কেন্দ্রের এই নয়া ফরমান নিয়ে তৃণমূলের তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল নেতা তাপস রায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘যে কোনও মূল্যে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কেন্দ্র। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যের সমান ভূমিকা। সে জায়গায় রাজ্যের ওপর কেন্দ্রের এই খবরদারি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী।’ অন্যদিকে নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, আসলে বাংলায় কেন্দ্রের সব প্রকল্পের টাকাই বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগে তা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে হাজারো টিম বাংলায় পাঠিয়েও কোনও দুর্নীতি ধরতের পারা যাচ্ছে না। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন সব নিয়ম করা হচ্ছে যা নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে আপত্তি উঠবেই। আর সেই সুযোগে সেই কারণকে তুলে ধরেই কেন্দ্রের টাকা পাঠানো বন্ধ করা হবে।
