নিজস্ব প্রতিনিধি: হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র(Howrah Constituency) থেকে বিজেপির প্রার্থী(BJP Candidate) হয়েছেন হাওড়া পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী(Rathin Chakrabarty)। তাঁর সমর্থনে হাওড়া শহরের ডুমুরজমার মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে(Narendra Modi) দিয়ে সভা করাতে চেয়েছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সেই মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন পায়নি পদ্মশিবির। আর তাই ডুমুরজলায় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করানোর পরিকল্পনা কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। আর সেই ঘটনা রথীনের নির্বাচনী যুদ্ধে বড় ধাক্কা হয়ে থেকে গেল। রথীন হাওড়া শহরের স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ভোলানাথ চক্রবর্তীর ছেলে। রথীন নিজেও বেশ প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত চিকিৎসক। তৃণমূলের হাত ধরে তাঁর রাজনীতির মাঠে পা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁকে হাওড়া পুরনিগমের মেয়র পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেই রথীনই তৃণমূল(TMC) ছেড়ে একুশের ভোটে চার্টাড বিমানে চেপে দিল্লিতে গিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। একুশের ভোটেও পদ্মশিবির তাঁকে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু রথীন হেরেছিলেন। এবারেও পদ্মশিবির তাঁকে প্রার্থী করেছে। যদিও সেই যুদ্ধে জয়পরাজয়ের আগেই বড় ধাক্কা খেয়ে গেলেন তিনি।
একুশের ভোটে রথীন প্রার্থী হয়েছিলেন পদ্মশিবিরের হাওড়া শহরের মধ্যে থাকা শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন ক্রিকেটার মনোজ তেওয়ারি। সেই ভোটে রথীন হেরেছিলেন ৩২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে। এহেন এক হেরো প্রার্থীকে লোকসভা নির্বাচনে কেন প্রার্থী করা হল তা নিয়ে হাওড়া শহরের পদ্মশিবিরে তীব্র ক্ষোভ তো রয়েইছে, প্রশ্নও রয়েছে। কার্যত পদ্ম শিবিরের নেতারা সেভাবে রথীনের প্রচার নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না। প্রচারে বিজেপির কর্মীদের দেখা গেলেও শহরের পরিচিত পদ্মনেতাদের কাউকেই সেভাবে দেখা না যাওয়ায় আমজনতার মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রথীনের ভোটপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে। এর মাঝেই তাঁর প্রচারে জোর দিতে বঙ্গ বিজেপির তরফে পরিকল্পনা করা হয় হাওড়া শহরের ডুমুরজলার মাঠে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করানোর। কেননা সেই মাঠের অবস্থান যেমন নবান্ন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরে, তেমনি সেই মাঠে দলের কর্মী ও সমর্থকদের আনতে কোনও অসুবিধা হতো না পদ্মশিবিরের। মাঠের একদিকে দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্র, একদিকে মধ্য হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্র, একদিকে শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্র। নাগালের মধ্যেই সাঁকরাইল ও উত্তর হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রও। তাই আমজনতার এই মাঠে আসতে অসুবিধা হতো না।
কিন্তু এখন সেই পরিকল্পনা মাঠে মারা পড়েছে। ডুমুরজলার পরিবর্তে এখন প্রধানমন্ত্রীর সভা পাঁচলা বা সাঁকরাইলে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিবর্তে শিবপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দিয়ে রোড শো, দক্ষিণ হাওড়াতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে দিয়ে রোড-শো এবং মিঠুন চক্রবর্তীকে দিয়ে সভা করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যদিও খাস হাওড়া শহরের বুকে প্রধানমন্ত্রীর সভার আয়োজন করতে না পারার দরুণ রথীন শিবির বেশ ঝিমিয়ে পড়েছে। কেননা হাওড়া দীর্ঘদিনের তৃণমূল দুর্গ। সেখানে জোড়াফুলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। একুশের ভোটে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করাতে পারলে তা হয়তো রথীনের ঝুলিতে বাড়তি কিছু ভোট এনে দিত। কিন্তু পাঁচলা বা সাঁকরাইলে মোদির সভা হলে হাওড়া শহরের কয়জন বাসিন্দে বা পদ্মকর্মী বা সমর্থক সেই মুখো হবেন তা লাখ টাকার প্রশ্ন। কার্যত রথীন শিবির এখন রীতিমত হতাশায় ডুবে গিয়েছে এই ঘটনায়।