নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের বুকে শুরু হয়ে গিয়েছে অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচন(Loksabha Election 2024)। ইতিমধ্যেই ২ দফার ভোটগ্রহণ করা হয়ে গিয়েছে। ইভিএম বন্দী হয়েছে দেশের ১৮৯টি লোকসভা কেন্দ্রের জনমত। এর মধ্যে বাংলার ৬টি লোকসভা কেন্দ্রও রয়েছে। গতকাল বাংলার বুকে দ্বিতীয় দফায় ৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছে। এই ৩ কেন্দ্র হল – দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট। গত ১৯ এপ্রিল ছিল প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। সেদিন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি – এই ৩ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। সেই ভোটের পরে পরেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) তরফে জোর গলায় দাবি করা হয় ওই ৩ আসনেই তাঁরা বাজিমাত করতে চলেছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের প্রকাশ্য সভা থেকেই জানিয়ে দেন, সম্ভবত আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক জয়ী হতে চলেছেন। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ৩ কেন্দ্রেই তৃণমূল জয়ী হবে। গতকালের ভোট নিয়ে এখনও মমতা বা অভিষেকের কোনও বক্তব্য আসেনি সামনে। তবে তৃণমূলের দাবি, প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফার ভোটের জনমতও তাঁদের অনুকূলে থাকবে। আর তৃণমূলের এই দাবি, গতকালের নানা ঘটনা, ভোটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবকিছুই এখন চাপে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে।
বিজেপির চাপ কোথায়? উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি(BJP) সারা দেশে একক ভাবে মোট ৩০৩টি আসন দখল করেছিল। অর্থাৎ কেন্দ্রে সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগারের থেকে ৩১টি আসন বেশি পেয়েছিল বিজেপি। সেই নির্বাচনেই বিজেপি বাংলা থেকে পেয়েছিল ১৮টি আসন। স্বাভাবিক ভাবেই এটা বলা যায় যে, বাংলাই বিজেপিকে একক ভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠন এবং ৩০০’র গন্ডি পার করাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। এবার সেই বাংলাতেই চাপের মুখে বিজেপি। উনিশের ভোটে উত্তরবঙ্গের(North Bengal) ৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। ১টি গিয়েছিল কংগ্রেসের দখলে। তৃণমূলকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। সেই নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের বড়, মেজ, সেজ, ছোট নেতারা থেকে থেকেই বাংলা ভাগের দাবি তুলে আসছিলেন। কেউ তুলছিলেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি, কেউ পৃথক কোচ রাজ্যের দাবি, কেউ বা পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি তুলেছেন। সব থেকে বেশি দাবি উঠেছিল পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য গঠনের জন্য। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায় উত্তরে বিজেপির দাপট কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলার সব আসনে এবং কোচবিহার জেলার বেশিরভাগ আসনে বিজেপি জিতলেও সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক তাঁদের হাতছাড়া হয়েছিল। এমনকি, রাজবংশী ভোটও কিছুটা হলেও তৃণমূলমুখী হয়েছিল।
এই অবস্থায় ২৪’র লোকসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে ছিল কার্যত উত্তরবঙ্গের মাটি ধরে রাখার ভোট। সেই সঙ্গে কেন্দ্রে সরকার গঠনের পথে গতবারের মতোই এগিয়ে থাকার ভোট। কিন্তু ১৯ এপ্রিল এবং ২৬ এপ্রিল, এই দুই দিনের ভোটচিত্র কার্যত সাফ বলে দিচ্ছে বিজেপি রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল যতটা জোর গলায় দাবি করছে, তাঁরা ভোট হয়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গের ৬টি আসনেই জয়ী হতে চলেছে, ঠিক ততটা জোর গলায় কিন্তু বিজেপির কোনও নেতাই দাবি করতে পারছেন না যে, তাঁরা গতবারের জেতা ওই ৬টি আসনই এবার ধরে রাখতে পারছেন। প্রথম দফার মতো গতকালও দেখা গিয়েছে ৩টি লোকসভা কেন্দ্রেই বহু বুথে এজেন্টই দিতে পারেনি বিজেপি। চাপে থাকা গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা দিন ভর ব্যস্ত থেকেছেন কমিশনের(ECI) কাছে ভুরি ভুরি অভিযোগ জানাতে। এই পর্বেই কমিশনের কাছে যত সংখ্যক অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলির তরফে জমা পড়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯টি পদ্মপার্টির।
রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, এই পর্বে ভোট করাতে সত্যিই যে চাপে পড়তে হয়েছিল, বিজেপির অভিযোগের ডালি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা, কোথাও রাজ্য পুলিসের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। এমনকী হাতে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও কেন তা চালায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। বিস্তা নিজে ৫০টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন। বিমল গুরুংও জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ে বিজেপি কম ভোট পাবে। পদ্ম শিবিরের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট লড়তে নামা বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। ভোট শেষে তাঁর হুমকি, ‘আমাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফল ভুগতে হবে বিজেপিকে।’ গতকাল দ্বিতীয় দফার ভোটে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩টি কেন্দ্রে গড়ে ৭১.৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে যা গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ কম। সেটাও চাপে রেখেছে বিজেপিকে।