নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার অগ্নিকন্যার মুকুটে যোগ হল সাফল্য ও সম্মানপ্রাপ্তির আরও এক পালক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের(Calcutta University) পথে হেঁটে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ও(St. Xaviers University) এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) ডি লিট উপাধিতে সম্মাণিত করতে চলেছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুষ্ঠান। সেখানেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এই সম্মাণে সম্মাণিত করতে চলেছে সেন্টা জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ডি লিট(D.Litt) সম্মাণ তুলে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে বাংলার তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী(Kesharinath Tripathy) সেই সম্মাণ তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। আর সেই সম্মাণপ্রাপ্তির পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি এর যোগ্য নন। কিন্তু এই সম্মান তাঁর জীবনকে পূর্ণ করে দিয়েছে। এখন দ্বিতীয় ডি লিট প্রাপ্তির পরে তিনি কী বার্তা দেন সেইদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে যখন মমতাকে ডি লিট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল, তখন তা নিয়ে কিছু কম বিতর্ক হয়নি। এমনকি তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। ঘটনার জেরে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। তার জেরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সম্মাণ তিনি আদৌ গ্রহণ করবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ঘটনার জেরে সেই সময় বঙ্গ বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন, ‘সরকার এমন এক জনকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করেছে, যিনি কোনও দিন কলেজে পড়াননি। তিনিও প্রতিদানে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন!’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার অনুদান দিচ্ছে, সেই সরকারেরই প্রধানকে বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট দিচ্ছে, অদ্ভুত ব্যাপার! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট দিয়েছিল জ্যোতি বসুকেও। কিন্তু তখন জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না।’ যদিও সেই সময় কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলেছিলেন কংগ্রেসের ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন মমতা। গত ছ’বছর ধরে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সমাজসেবার স্বীকৃতি দিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যদি ডিলিট দেয়, এত বিতর্কের কী আছে? যদি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ডিলিট দিতে পারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, তা হলে মমতাকে নয় কেন? রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ সমর্থন করছি না।’ এবার মমতার দ্বিতীয় ডি লিট প্রাপ্তির ঘটনায় এই ৩ দলের নেতারা কী প্রতিক্রিয়া দেন সেই দিকেও সকলে তাকিয়ে থাকবেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট প্রাপ্তির অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের এই সম্মাণপ্রাপ্তি ও আঘাত প্রাপ্তি নিয়ে আবেগঘণ হয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘আসার আগে আজকে আমার মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব হচ্ছিল যাব কি যাব না। আমি সে সব জায়গায় যেতে চাই যেখানে মিনিমাম সম্মানটুকু পাওয়া যায়। যেখানে সম্মান পাওয়া যায় না সেখানে যেতে চাই না। বিশ্বাস করুন আমি কিন্তু ডিগ্রিটা কোনও দিন ব্যবহার করব না। আপনারা আমাকে সাম্মানিক দিয়েছেন, সেটা সাম্মানিকই থাকবে। কিন্তু আপনারা আমার জীবনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্রী। কখনও ভাবেননি, এ ভাবে এক দিন সমাবর্তনে ভাষণ দেব। আগেও আমাকে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সম্মান দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। আমার এ সবের যোগ্যতা নেই বলেই গ্রহণ করিনি। সারা জীবন লড়াই করতে করতে, মরতে মরতে একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’