নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা রয়েছে এই সেতু নিয়ে। চওড়া না হওয়ায় নিত্যদিনই এই সেতুর দুই দিকে লম্বা লাইন পরে যায় যানবাহণের। তা সে রাত হোক কী দুপুর। কোনও কোনও দিন সেই যানজট ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত ছাড়তে সময় লাগে। ফলে কলকাতায় ঢোকার পরে হোক কী আগে নিত্যদিনই কম বেশি দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় আমজনতাকে। এই সমস্যা কাটাতে রাজ্য সরকারের(State Government) তরফে রেলকে বার বার বলা হয়েছে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করেনি রেল। অগ্যতা রাজ্য সরকারই বিকল্প উড়ালপুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেই উড়ালপুল নির্মাণও সময় সাপেক্ষ বিষয়। তাই সেই সুতি নির্মাণ হয়ে চালু না হওয়া পর্যন্ত পুরাতন সেতু দিয়ে যান চলাচল যে বজায় রাখতে হবে সেতাও রাজ্য সরকারের জানা। এই অবস্থায় পুরাতন সেতু নিয়ে পুজোর পরেই বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে নবান্ন। নজরে হাওড়ার সাঁতরাগাছি সেতু(Santragachi Bridge)। পুজোর পরেই এই সেতুর একাংশ বন্ধ রেখে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পাশাপাশি তার সংস্কারসাধনও করে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশনের পূর্ব দিকে হাওড়া-খড়গপুর শাখার রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সাঁতরাগাছি সেতু। এই সেতুর মাধ্যমেই ৬ ও ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে বিদ্যাসাগর সেতুর(Vidyasagar Setu) যোগাযোগ রয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশের মানুষ সড়কপথে কলকাতায় আসতে চাইলে এই পথেই রাজ্যের রাজধানীতে পা রাখেন। একই সঙ্গে দেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে কলকাতার সড়কপথে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেও এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিন্তু এই সেতুর স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল নেই। কেননা বিদ্যাসাগর সেতু নির্মাণের সময় কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মীত এই সেতু খুব একতা চওড়া নয়, শক্তপোক্তও নয়। যে সময় এই সেতু নির্মীত হয়েছিল তখন দিনে ১০ হাজার গাড়ি যাওয়ার মতো করে এই সেতু তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় এই সেতুর ওপর দিনকে দিন যানবাহণের চাপ বেড়েই চলেছে। সেই সব যানবাহণের মধ্যে ভারী যানবাহনও চলছে। আর তার জেরে এই সেতু ক্ষতিগ্রস্থও হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা এই সেতু ভেঙে ফেলার বার্তা দিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের তরফেও সাঁতরাগাছি সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য রেলকে বলা হয়েছিল। কিন্তু রেল সেই আবেদনে এখনও কর্ণপাত করেনি। এদিকে এই সেতুর দুর্বল অবস্থা ও পর্যাপ্ত চওড়া না থাকার কারণে রাজ্য সরকার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে নবান্ন(Nabanna) থেকে অঙ্কুরহাটি(Ankurhati) পর্যন্ত একটি উড়ালপুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সেতু নির্মাণের কাজ পুজোর পরে পরেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই সেতু নির্মাণ ও চালু হতে আরও ২-৩ বছর সময় লাগবে। তাই আরও অন্তত ২-৩ বছর সাঁতরাগাছি সেতু দিয়ে যানবাহন যাতে চালানো যায় তার ব্যবস্থা বজায় রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুজোর আগে টালা ব্রিজ চালু হয়ে যাওয়ার পরে সাঁতরাগাছি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পাশাপাশি তার সংস্কারসাধন করা হবে। সেক্ষেত্রে পুজোর পরেই এই সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুধুমাত্র ২ বা ৪ চাকার ছোট গাড়ি এবং যাত্রীবাহী বাস চালানো হবে এই সেতু দিয়ে। পণ্যবাহী ভারী যানবাহণ আন্দুল রোড, মাকড়দহ রোড ও নিবেদিতা সেতু দিয়ে ঘুরিয়ে চালানো হবে। পুজোর পরেই সাঁতরাগাছি সেতুর একটি লেন বন্ধ করে এই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। হবে তার সংস্কারের কাজও যা সম্পূর্ণ হতে ২-৩ মাস সময় লাগবে। ৫-৬ বছর বাদে নবান্ন থেকে অঙ্কুরহাটি পর্যন্ত উড়ালপুল নির্মাণ ও চালু হয়ে যাওয়ার পরে এই সেতু দিয়ে শুধুমাত্র হালকা যানবাহন চালানো হতে পারে বা সেতুটি পুরো ভেঙে ফেলা হতে পারে বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।