নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(Justice Abhijit Gangopadhay)। সেই সব রায়ের সুবাদে হাজার হাজার মানুষের চাকরি যেমন গিয়েছে তেমনি অনেক মানুষের মুখে হাসিও ফুটেছে। একই সঙ্গে এটাও লক্ষ্যণীয় তাঁর দেওয়া রায় যেমন রাজ্যের শাসক শিবিরে যেমন তীব্র সমালোচিত হয়েছে তেমনি রাজ্যের আইনজীবী মহলের একাংশেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার সেই ছবিটাই ধরা পড়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court of india) পর্যবেক্ষণে। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী দিনে কলকাতা হাইকোর্টে বাংলার নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আর কোনও মামলার শুনানি তাঁর এজলাসে হবে কিনা তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপর। আর এই অবস্থা নিয়েই ট্যুইট করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে খোঁচা মেরেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
আরও পড়ুন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে হলফনামা চাইল সুপ্রিম কোর্ট
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কী পর্যবেক্ষণ(Observation)? কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলা এদিন সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। কুন্তলের অভিযোগ ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকেরা জেরার নামে তাঁর কাছ থেকে জোর করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলিয়ে নিতে চাইছে। কুন্তলের এই অভিযোগের জেরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকেরা এবার অভিষেককে জেরা করুক। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল তৃণমূল। তার জেরে সুপ্রিম কোর্ট আগেই ওই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এদিন তো সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল অবধি বাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। মাঝে এদিন কুন্তলের চিঠি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। সেখানে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়(Chief Justice D Y Chandrachur) জানিয়েছেন, ‘বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় টেলিভিশনে কী কোনও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন? যদি দিয়ে থাকেন ঠিক করেননি। কোনও বিচারপতি বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। তেমন হলে তিনি মামলার শুনানি করবেন না। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যদি বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তিনি ওই মামলার শুনানি করার অধিকার হারিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ওই মামলার শুনানির জন্য নতুন বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।’
আরও পড়ুন বিরোধীরা একসঙ্গে বসে রণনীতি তৈরি করব: মমতা
শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্ট এদিন নির্দেশ দিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে এই বিষয়টি হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে দেশের শীর্ষ আদালতকে। কুন্তলের চিঠি মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পিটিশনে জানান, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে প্রথম থেকে নিশানা করছেন। যে মামলায় তিনি জড়িত নন সেই মামলার প্রেক্ষিতেও তাঁকে জেরা করার কথা বলা হচ্ছে। অতীতে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও তাঁর নামে মন্তব্য করা হয়েছিল। এরপরেই এদিন সুপ্রিম কোর্ট ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও চেয়ে পাঠিয়েছেন। সেটিও ২৮ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে যখন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ঠিক তখনই তাঁকে ট্যুইট করে খোঁচা দিয়েছেন কুণাল(Kunal Ghosh)। তাঁর দাবি, ‘চরম অস্বস্তিতে পড়তে চলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে টিভি চ্যানেলে তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কাছে মেনশন করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভি। শুক্রবারের মধ্যে রেজিস্টার জেনারেলকে এই বিষয়ে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।’
আরও পড়ুন হলদিয়া ও হরিণঘাটায় নতুন শিল্পতালুক, সিঙ্গুরে পাইকারি বাজার
এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনৈতিক নেতাদের মতো আচরণ করেছেন। তা মোটেও সঠিক কাজ নয়। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যদি সাক্ষাৎকার উনি দিয়েও থাকেন তা উচিত হয়নি। যে মামলা তিনি শুনছেন, তা আর তিনি শুনতে পারেন না। কারণ, এতে রাজনৈতিক বিষয় জড়িয়ে যাচ্ছে। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আমরা বলব নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিতে। সবিনয়ে একটা কথা আমরা বার বার বলে আসছিলাম— যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা যা করছেন, করুন। কিন্তু তার বাইরে বেরিয়ে উনি রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করছিলেন। ব্যক্তিগত মতপোষণ করছিলেন। বিরোধীদের অক্সিজেন দিচ্ছিলেন উনি। বিরোধী নেতার মতো আচরণ করছিলেন বিচারপতি।’’ কুণালের সংযোজন, ‘‘বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান রেখে আমরা যে অভিযোগ করেছিলাম, তার মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট।’