নিজস্ব প্রতিনিধি: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(Abhijit Gangopadhay) যতদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি(Former Judge of Calcutta High Court) হিসাবে নিয়োগ দুর্নীতির নানা মামলায় রায় দিচ্ছিলেন ততদিন তিনি বেশ শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু সেই রায়ের মাধ্যমে যখন তিনি ৩০-৪০ হাজার মানুষের চাকরি খেতে শুরু করে দিলেন ঠিক তখন থেকেই তিনি সমালোচনার মুখেও পড়েত শুরু করেন। এই অবধিও ঠিক ছিল, কেননা তাঁর অনেক রায়ই সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিল বা সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু বিচারপতির আসন থেকে স্বেচ্ছাবাসর নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এবং ভোটের ময়দানে নেমে পড়া, এই ঘটনাকে রাজ্যের অনেকেই ভাল ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বটেই, প্রকাশ্যেও অনেকেই এই নীতির বিরোধিতা করছেন। এবার সেই তালিকায় নাম উঠে গেল খোদ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমো কোর্টের(Supreme Court) প্রধান বিচারপতিরও। কেননা দেশের প্রধান বিচারপতি(Chief Justice) ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়(D Y Chandrachud) নাম না করেই অভিজিতকে বিঁধেছেন তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে।
নাগপুর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলের প্রতি আকর্ষণ থাকতেই পারে। কিন্তু বিচারপতি ও আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা-আনুগত্য থাকা উচিত সংবিধানের প্রতি। আমাদের মতো একটি প্রাণবন্ত এবং যুক্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে অধিকাংশ ব্যক্তির একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ বা প্রবণতা আছে। অ্যারিস্টটল বলেছেন, মানুষ রাজনৈতিক প্রাণী। আইনজীবীরাও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু বারের সদস্যদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আনুগত্য দলীয় স্বার্থে নয়, বরং আদালত এবং সংবিধানের প্রতি থাকা উচিত। স্বাধীন বার আইন এবং সাংবিধানিক শাসন রক্ষার জন্য একটি ‘নৈতিক ভিত্তি’ হিসাবে কাজ করে। আইন সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মানুষের মতো কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা ঠিক নয়। রায় দেওয়া হয়ে গেলে তা জনগণের সম্পত্তি। তা নিয়ে প্রশংসা-সমালোচনা উভয়ই হতে পারে। সেটা সাংবাদিকের কলমে, রাজনৈতিক ভাষ্য বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতে পারে। সে জন্য বিচারবিভাগকে তৈরি থাকতে হবে। কিন্তু বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইনজীবীদের আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের বিচারাধীন মামলা এবং রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করার প্রবণতা দেখে আমি খুব বিরক্ত।’ ওয়াকিবহাল মহলের মত, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গেই দেশের প্রধান বিচারপতি তাঁর নাম না নিয়েই এই বার্তা দিয়েছেন।