নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে রাজ্য সরকার পোষিত এবং সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির(School Recruiting Scam) ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court) নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) গঠিত স্পেশ্যাল ডিভিশন বেঞ্চ গত সোমবার এক চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছিল। সেদিন বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির সেই স্পেশ্যেল ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের চাকরি খারিজ করার। শুধু তাই নয় প্যানেলের মেয়াদ শেষে যারা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের আবার ৪ সপ্তাহের মধ্যে সুদ সহ বেতনের টাকা মেটানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বেঞ্চের নির্দেশ ছিল সিবিআই এই ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এবং যেহেতু অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার জন্য বাড়তি পদ তৈরি করার অনুমোদন দিয়েছিল খোদ রাজ্যের মন্ত্রিসভা তাই সিবিআই চাইলে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, স্কুলসার্ভিস কমিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারারা। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়। সেখানেই রাজ্যের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ(Stay order on CBI Inquiry Order) দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিন সকাল থেকেই গোটা বাংলা কার্যত তাকিয়ে ছিল সুপ্রিম কোর্টের দিকে। কেননা এই ২৬ হাজার চাকরিহারাদের ওপরেই নির্ভর করছেন অন্তত ১ লক্ষ মানুষ ও তাঁদের ভবিষ্যৎ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। সেখানেই শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘প্যানেলের বাইরে নিয়োগ করা হয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ জালিয়াতি।’ যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে প্রশ্ন তোলেন যে, ৮ হাজার জনের নিয়োগ বেআইনি ভাবে হলেও ২৩ হাজার চাকরি কেন বাতিল করা হল?’ পাল্টা প্রধান বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করে বলেন, ‘বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছে, এমন অভিযোগ জানার পরেও কী ভাবে সুপার নিউমেরিক পোস্টের অনুমোদন দিল রাজ্যের মন্ত্রিসভা? কেন সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করা হল?’ যদিও এই প্রশ্ন তোলার পরেও এদিন আদালত রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তের ওপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, এদিন শুনানি চলাকালীন সময়ে রাজ্যের আইনজীবী শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন, এই সময় নির্বাচন চলছে। এখন সিবিআই তদন্ত করলে তো পুরো মন্ত্রিসভা জেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, যা কার্যকর করা সম্ভব নয়। ওই রায়ের ওপর তাই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। তার পরেই সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। তবে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তে স্থগিতাদেশ দিলেও কলকাতা হাইকোর্টের বাকি রায়ে এখনই স্থগিতাদেশ এদিন দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বরঞ্চ এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী সোমবার। আর তাই চাকরিহারাদের এদিনে অনেকটাই হতাশ দেখিয়েছে।