নিজস্ব প্রতিনিধি: শাহি সভা সুপারডুপার ফ্লপ। এমনকি কেন্দ্রের অধীনে থাকা Intelligence Bureau’র রিপোর্টেও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী সভা করতে এলেও লক্ষ মানুষের সমাবেশ নাও ঘটতে পারে। কার্যত এই দুই ঘটনাই বাংলার মাটিতে পদ্মের চূড়ান্ত দুরাবস্থা তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। এদিকে হাতে সময় বিশেষ নেই। দুয়ারে কড়া নাড়ছে লোকসভার ভোট(General Election 2024)। উনিশের ভোটে এই রাজ্য থেকেই পদ্মের ঝুলিতে গিয়েছিল ১৮টি আসন। আর এবারে ১টিও আসন আসবে কিনা সন্দেহ। বঙ্গ বিজেপির ওপর সব ছেড়ে দিলে হাতে যে কিছুই আসবে না সেটা বুঝেই এবার বাংলার মাটিতে পদ্ম ফোটাতে সঙ্ঘের(RSS) দ্বারস্থ হল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই সূত্রেই জানা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারীর(Suvendu Adhikari) ওপর আর ভরসা না রেখেই এবার লোকসভার ভোটের আগে বাংলার মাঠে নামছে সঙ্ঘের বিশেষ বাহিনী। কার্যত এই ঘটনা যে সুকান্ত ও শুভেন্দুর ওপর চূড়ান্ত অনাস্থার পরিচয়ক তা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪’র ভোটের জন্য আর বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর তাই বাংলার মাঠে নামছে সঙ্ঘের বাহিনী। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই এই বাহিনী এ রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে গোপনে কাজ করবে। জানুয়ারি মাস থেকেই সেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। বিজেপির নেতা-কর্মীরা রাজ্যের জেলায় জেলায় কী কাজ করছে সেদিকেও নজর রাখবে এই বাহিনী। সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি ও সঙ্ঘের নিজস্ব সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, কোচবিহার, বনগাঁ, পুরুলিয়া ও আরামবাগ ভিন্ন বাংলার আর কোনও লোকসভা কেন্দ্রেই লড়াই করার মতো অবস্থায় নেই পদ্মশিবির। এই ৪টিতেও যে জয়ের মুখ দেখা যাবে সেটাও নিশ্চিত নয়। আর তাই জানুয়ারি মাস থেকেই বাংলার মাঠেঘাঠে পদ্মের ড্যামেজ কন্ট্রোলের কাজে নামছে সঙ্ঘের বাহিনী।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সঙ্ঘের এই বাহিনীর সদস্যরা বুথ ধরে ধরে জনমত যাচাই করে রিপোর্ট দেবে। সেই কারণে বুথ ও এলাকা ধরে স্বয়ংসেবক নিয়োগ করা হবে। যাঁরা রিপোর্ট দেবেন নির্দিষ্ট দায়িত্বে থাকা নেতাদের। কিছু আসনে সঙ্ঘের কিছু সদস্যকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো হতে পারে। এদের বুথ এজেন্ট হবে সংঘেরই লোকেরা। সেই সঙ্গে এই বাহিনীর সদস্যরা দেখবেন বিজেপি কোথায়, কী প্রচার করছে, লোক কেমন হচ্ছে। সেই মর্মে তাঁরা রিপোর্টও জমা দেবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজেপি নেতাদেরকে পরামর্শও দেবে এই বাহিনী। সেই সঙ্গে এই বাহিনী প্রচার করবে মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের। ছোট ছোট সভা করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের প্রচার চালাবে এরা। সেই কড়া হিন্দুত্বের প্রচারে থাকবে রামমন্দির(Ram Mandir)। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা ও তাঁদের বিজেপির স্বপক্ষে ভোট দেওয়ানোর বিষয়টিও দেখবে বাহিনীর সদস্যরা।
লোকসভা ভোটের প্রচারে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা এলে তাঁদের সভায় জমায়াতের বিষয়টিও দেখবে সঙ্ঘের বাহিনী। বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে সমান্তরালভাবে নীরবে কাজ করবে এই বাহিনী। সম্প্রতি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের মুখ দেখেছে পদ্মশিবির। সেখানে নাকি এই ভাবে বিজেপির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে কাজ করে গিয়েছে সঙ্ঘের বাহিনী। আর তাতেই নাকি এসেছে সাফল্য। এবার সেই মডেলকেই বাংলায় কাজে লাগাতে চাইছে পদ্মশিবির। যদিও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলাদা। এখানে এই নয়া কৌশল আদৌ কোনও কাজ দেবে কি না, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই সংশয় ও প্রশ্ন থাকছে। কারণ, বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের যা নড়বড়ে অবস্থা, গোষ্ঠীকোন্দল, তাতে সঙ্ঘ যতই কৌশল প্রয়োগ করুক না কেন, সফল হওয়া কঠিন।