নিজস্ব প্রতিনিধি: ৮জন নতুন মন্ত্রীর আগমন, ৪জনের প্রস্থান। বদল মন্ত্রী হিসাবে থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের দফতরেও। বদল হয়েছে দলের সংগঠনেও। সব জায়গাতেই নতুন মুখ তুলে আনার প্রবণতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছেন প্রবীণরাও। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের অন্দরের এই বদলের মাঝেই এবার আরও এক বদল চোখে পড়বে আমজনতার। কলকাতা(Kolkata) তো বটেই রাজ্যের সর্বত্র থেকে এবার সরিয়ে ফেলা হবে ত্রিফলা(Triphola Lamppost) আলো যা কার্যত পরিবর্তনের পরে তৃণমূলের(TMC) বিকল্প প্রতীক হয়ে উঠেছিল। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাতিস্তম্ভ কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয় হয়ে উঠেছিল। এই বাতিস্তম্ভকে ঘিরে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল, রাজনৈতিক বিতর্কের রেশ বাংলায় আরও কতদিন থেকে যাবে সেটা জল্পনার বিষয়। কিন্তু এটা সত্যি যে বাংলা থেকে এবার বিদায় নিতে চলেছে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ।
২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন সরকার কলকাতা সহ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই ত্রিফলা বসানোর সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়। কার্যত যতটা না রাস্তা আলোকিত করার জন্য এই বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি তা বিশেষ বিশেষ এলাকায় সৌন্দার্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। শুধুই কলকাতা নয়, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র, তীর্থকেন্দ্র, শহরতলি এলাকা, বিভিন্ন জেলার পুরসভা এলাকায় এই ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছিল যা আমজনতার মন জিততেও সক্ষম হয় অনেকাংশেই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এলাকার ভোলও বদলে গিয়েছিল। কিন্তু এর পাশাপাশি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভকে নিয়ে বিতর্কও কিছু কম হয়নি। উঠে৪ছে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। ঘটেছে অজস্র দুর্ঘটনা আর তার জেরে মৃত্যুর মিছিল। পাশাপাশি তৃণমূল ও ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ একে অপরের যেন পরিপূরক হিসাবে উঠে এসেছিল রাজ্য রাজনীতিতে(Politics)। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনওদিন কোথাও দেখা যায়নি একটি বাতিস্তম্ভকে ঘিরে রাজনীতির আঙিনায় এত চর্চা, এত বিরোধ, এত বিতর্ক। অবশেষে সেই ত্রিফলা আলো বিদায় নিচ্ছে বাংলার বুক থেকে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা ও শহরতলিতে তো বটেই রাজ্যের কোথাও আর নতুন করে ত্রিফলা আলো লাগানো হবে না। যেখানে যেখানে এই ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ আছে, ধীরে ধীরে তাও তুলে নেওয়া হবে। সেই সব জায়গায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের জায়গায় বসবে একফলা বাতিস্তম্ভ। ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় তো বটেই রাজ্যের অন্যত্রও যে সব জায়গায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ ভেঙে গিয়েছে সেখানে একফলা বাতিস্তম্ভই বসানো হচ্ছে। খাস কলকাতা শহরের বুকেই কার্যত হাজারের কাছাকাছি আংশিক ভাঙা বা অকেজো ত্রিফলা বাতিস্তম্ভকে সরিয়ে একফলা বাতিস্তম্ভ বসানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন বিদায় জানানো হচ্ছে ত্রিফলা আলোকে? কলকাতা পুরনিগমের আলোক বিভাগের তরফে জানা গিয়েছে, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ নির্মাণে খরচ বেশি, কিন্তু টেকসই কম। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের বিলও বেশি আসে। পাশপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এই বাতিস্তম্ভের নানা অংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই বদল আনা হচ্ছে। যদিও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না বলে বৃষ্টি পড়লেই তা থেকে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। তা ঘিরে আমজনতার মধ্যেও ক্ষোভ চড়ছে। তাই সব কিছু ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্ন-প্রকল্প’ ত্রিফলা বাতিস্তম্ভকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজে। সেই নির্দেশই এবার পালিত হচ্ছে কলকাতা পুরনিগম সহ অন্যত্র। মুচকি হেসে তাই অনেকেই বলছেন, তৃণমূল যে বদলাচ্ছে তার সব থেকে বড় প্রমাণ এই ত্রিফলায় ইতি টেনে দেওয়া।