এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

রঙ-তুলির ক্যানভাসে বাংলার ‘খোয়াব গাঁ’, জঙ্গলমহলে এক অন্য ভ্রমণ

নিজস্ব প্রতিনিধি: এ এক অন্য দূনিয়া। ইচ্ছে করলেই আপনি হারিয়ে যেতে পারেন এই স্বপ্নের জগতে। তবে এই স্বপ্ন একেবারেই সাদা-কালো নয়, রীতিমতো রঙিন। নিতান্তই বাংলার এক গ্রাম। পুরো গ্রামটাই যেন একটা ক্যানভাস। আর তাতেই রং-তুলির সাহায্য়ে কতই স্বপ্ন এঁকেছেন শিল্পীরা। এক অখ্যাত গ্রাম লালবাজার, বর্তমানে যা পরিচিত হচ্ছে ‘খোয়াব গাঁ’ নামে। তবে কলকাতার বাঘা পুলিশ অফিসারদের সেই বাড়িটা নয়। এ লালবাজার ঝাড়গ্রামে।

শবর সম্প্রদায়ভুক্ত মাত্র ১৩ টি পরিবারের এই গ্রামে গেলে বিস্ময়ের যেন শেষ নেই। মাত্র ১৩টি পরিবারের ৭৫ জন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষের বাস এই গ্রামে। কলকাতার চালচিত্র একাডেমীর ছোঁয়ায় সাদাকালো গ্রামটি এখন রামধনু হয়ে উঠেছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল হয়ে উঠেছে জীবন্ত ক্যানভাস। জঙ্গলের গাছ কেটে বিক্রি করেই জীবিকা চালাতেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু একদিন কলকাতা থেকে কয়েকজন শিল্পী এসে পৌঁছোলেন এখানে। তাঁদের হাতেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল গ্রামের ছবি।

কারণ জঙ্গল না বাঁচলে এখানকার মানুষই বা বাঁচবেন কী করে? একথা গ্রামবাসীদের বোঝাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। তাঁদের হাতেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল গ্রামের ছবি। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গাছ কাটার জীবিকা ত্যাগ করে সাময়িকভাবে ক্ষেতমজুরি বা রাজমিস্ত্রির কাজকেই বেছে নিলেন। কারণ সাক্ষরতা গ্রামে খুব একটা পৌঁছয়নি। কারণ সবথেকে কাছের স্কুলটাও গ্রাম থেকে অনেক দূরে। তবুও লোধা সম্প্রদায়ের মানুষজন বুঝলেন জঙ্গল বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্ব। সাহিত্যিক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামটির নাম পাল্টে রাখেছিলেন ‘খোয়াব গাঁ’।

কী আছে এই গ্রামে? জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামে মাটির বাড়ির দেওয়ালগুলি সেজেছে রং-তুলিতে। কলকাতার নামী শিল্পীদের পাশাপাশি লোধা ছেলেমেয়েরাও সে ছবি এঁকেছে। একেকটি বাড়ি যেন একেকটি ক্যানভাস। তাই নিতান্ত ছা-পোষা মাটির বাড়িও হয়ে উঠেছে সুন্দরী। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি কোনরকম সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে কঠোর পরিশ্রমে সাজিয়ে তুলেছে ছোট্ট এই গ্রামটি, ফলে অতীতের লালবাজার হয়ে উঠেছে আজকের ‘খোয়াব গাঁ’। চালচিত্র অ্যাকাডেমি-র প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক চিত্রশিল্পী মৃণাল মণ্ডল ও তাঁর সহযোগীরা এই গ্রামেই গড়ে তোলেন ‘ওপেন স্টুডিয়ো’। সেখানেই আঁকা শেখেন এই গ্রামের কচিকাঁচারা। তাঁদের হাতের রঙ-তুলিতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে রঙিন ক্যানভাস। তাতে আঁকা নানান চালচিত্র। তাঁদের হাতেই সেজে উঠেছে খোয়াব গাঁ।

মাটির দেওয়াল, খড় বা টালির ছাদ। লোধা-শবরদের হাসি হাসি মুখ। এরকম ছাপোষা গ্রাম বাংলায় অনেক আছে। তবুও এই গ্রাম সকলের থেকে আলাদা। গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে পুরাণ, জীবনযাপন ও জীবনকথার চালচিত্র। গ্রামের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় আজ এই গ্রাম সত্যিই খোয়াব বা স্বপ্ন দেখে আগামীর। এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ‘ওপেন স্টুডিয়ো’ থেকে শিখেছে নানান শিল্পকর্ম। বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি ময়ূর, গনেশের মুখ, কাঁকড়া বিছে বা আরও অনেক কিছু। যার নাম কাটুম-কুটুম। এতে একদিকে যেমন লক্ষ্মীলাভ হয়, তেমনই এই গ্রামের টানে এখন পর্যটকদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। যারা ঝাড়গ্রাম বেড়াতে যাবেন, তাঁরা একটু খোঁজখবর নিয়ে এখান থেকে একবেলা ঘুরে আসতেই পারেন। তবে যেতে হবে গাড়ি ভাড়া করে। 

এই গ্রামের সহজ সরল বাসিন্দাদের অমায়িক ব্যবহার আপনাদের মুগ্ধ করবেই। যদি একবার ঘুরে আসতে পারেন এবং তাঁদের আরও উৎসাহিত করতে পারেন তাহলে ওই সহজ সরল মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন সব দিক থেকে। সহজ সরল মানুষগুলিকে দেখে সত্যিই ভালো লাগবে। পারলে সঙ্গে করে কিছু ড্রাই ফুড, রং, পেন্সিল, আর্ট পেপার নিয়ে যেতে পারেন গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের জন্য। বাংলার লোকজীবন আর ছবি যদি আপনাকে আকর্ষণ করে, এই গ্রামের হাতছানি তাহলে আপনি এড়াতে পারবেন না।

ঝাড়গ্রাম থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর পঞ্চায়েতের অধীন এই লালবাজার বা খোয়াব গাঁ গ্রামটি। ঝাড়গ্রাম শহরের কদম কানন এলাকায় নির্মীয়মান পুলিশ লাইনের পাশ দিয়ে সরু মাটির রাস্তা জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে এই গ্রামের দিকে। তবে বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষই খোয়াব গাঁ সম্পর্কে জানেন না। এমনকি এই গ্রামের আশেপাশের মানুষজনও এই গ্রাম সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাই যাওয়ার আগে ভালো করে জিজ্ঞেস করে যাবেন গ্রামের নাম লালবাজার।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

জম্মুতে লাঠিতে ভর করে ভোট দিতে হাজির ১০২ বছরের হাজি করম দীন

দিল্লি বিমানবন্দরে পাকড়াও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ভুয়ো পাইলট

বান্ধবীর বার্গার খেয়ে ফেলায় বিচারক-পুত্রকে গুলি করে হত্যা পুলিশ-পুত্রের

প্রবল বন্যার সুযোগে জেল ভেঙে পালালেন শতাধিক কয়েদি

চাকরি খোয়ানো ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি নোটিস যাবে

ঝাড়গ্রামে প্রচণ্ড গরমে কাদায় গড়াগড়ি দুই হাতির

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর