নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির(School Recruitment Scam) ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) স্পেশ্যাল ডিভিশন বেঞ্চের সাম্প্রতিকতম রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার মানুষের চাকরি চলে গিয়েছে। এর মধ্যে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার চাকরিহারা(Job Loosers) মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এদের মধ্যে অনেকেই আবার Tamluk Ghatal Central Co-Operative Bank থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছেন বা বাড়ি করছেন। এখন এদের চাকরি চলে যাওয়ায় সেই ঋণ কীভাবে শোধ হবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ওই ব্যাঙ্কের কর্তাদের। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই টাকা ঋণ গ্রহীতারা সুদ সহ ফেরত না দিলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে। তবে এটাও ঘটনা যে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের স্পেশ্যাল ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে নাকি তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় নাকি তা বাতিল হয় সেটা দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে Tamluk Ghatal Central Co-Operative Bank কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতে অর্থাৎ দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় Tamluk Ghatal Central Co-Operative Bank’র মোট ২৬টি শাখা রয়েছে। এছাড়াও একটি মিনি ব্রাঞ্চও আছে। এই সব শাখা থেকেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পাওয়া স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা ঋণ নিয়েছেন। বেতনভোগী হওয়ায় তাঁদের সহজেই Personal Loan এবং বাড়ি তৈরির লোন মঞ্জুর হয়েছিল। কিন্তু এখন কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬সালের প্যানেলের সকল শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি খারিজ হওয়ায় তাঁদের কাছ থেকে লোনের টাকা আদায় কীভাবে হবে তা নিয়ে কুলকিনারা পাচ্ছে না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। শুধু সমবায় ব্যাঙ্ক নয়, একই অবস্থা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও। সাধারণত, দু’বছর চাকরি হয়ে গেলে ব্যাঙ্ক বেতনভোগীদের ঋণ দিয়ে দেয়। প্রতি মাসের বেতন থেকে কিস্তি কেটে নেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। কিন্তু, নিয়োগের পর এভাবে একযোগে চাকরি বাতিল হতে পারে এটা কখনও ব্যাঙ্ক কর্তাদের ভাবনায় আসেনি। এখন চাকরি খোয়ানো ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বের করার পর Tamluk Ghatal Central Co-Operative Bank কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে বাড়ি বাড়ি নোটিস পাঠানো শুরু করবে।
নিয়মানুসারে Personal Loan’র ক্ষেত্রে শুধুমাত্র Salary Account-কে গ্যারেন্টার হিসেবে গণ্য করা হয়। Home Loan’র ক্ষেত্রে অনেক সময় বাড়ি বা জমি মর্টগেজ রাখা হয়। সেক্ষেত্রে মর্টগেজ রাখা সেই সম্পত্তি দখল নিতে পারে ব্যাঙ্ক। দেশে ব্যাঙ্ক ঋণ খেলাপিদের বাড়ি, জমি, দোকান, ব্যবসা, ব্যাঙ্ক আমানত, পোস্ট অফিসের আমানত, সোনা, বাড়ির আসবাব মায় পোষাক বা দামী জিনিসও বাজেয়াপ্ত করার আইন রয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি এই চাকরিহারা ঋণগ্রহীতারা ব্যাঙ্কের ঋণ সুদে আসলে শোধ করতে না পারেন তাহলে সেই টাকা উদ্ধারের জেরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে ও বাড়ি সহ যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের পথে হাঁটবে বলেই ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। কার্যত যা চাকরি হারানো মানুষগুলির পারিবারিক জীবনকেও রীতিমত ধাক্কা দেবে। অনেকেই হয়তো পথের ভিখারি হয়ে যাবেন। এই বিষয়ে Tamluk Ghatal Central Co-Operative Bank কর্তৃপক্ষ এখনও সংবাদমাধ্যমে কোনও বিবৃতি দেননি। তবে সূত্রে জানা গিয়েছে, ঋণ দেওয়া টাকা কীভাবে ফেরত আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা ও চিন্তাভাবনা চলছে।