এই মুহূর্তে




রম্ভার শ্লীলতাহানিই ডেকে এনেছিল লঙ্কেশের পতন – জানুন রামায়ণের অজানা কাহিনী




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় :  লঙ্কার মহাপরাক্রমশালী রাজা, অসীম ক্ষমতাধর, মহাজ্ঞানী লঙ্কেশ্বর রাবণ দেবাদিদেব মহাদেবের প্রতি ভক্তির জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে তাঁর অহংকার এবং আত্মসংযমহীন বাসনাই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল অন্ধকারের পথে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত লঙ্কার সাথে সাথেই ধ্বংস হয়েছিলেন নৈকষেয়। রামায়ণ শ্রষ্ঠা মহামুনি বাল্মীকির রচনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে এমনই একটি ঘটনা উঠে আসে, যা তার নৈতিক পতনকে চিহ্নিত করেছিল – যা ছিল স্বর্গীয় অপ্সরী রম্ভাকে ধর্ষণ।

পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, একদা এক রাতে রাবণ স্বর্গের মোহময়ী অরণ্যে ঘুরছিলেন, এমন সময় তিনি অপ্সরা রম্ভাকে দেখতে পান। রম্ভা ছিলেন অপরূপা স্বর্গীয় নৃত্যশিল্পী, যাঁর সৌন্দর্য ও নৃত্য স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় প্রশংসিত হত। রম্ভার ঐশ্বরিক সৌন্দর্য রাবণকে মুহূর্তেই মোহিত করেছিল, এবং কামুক রাবণের মনে জ্বলে উঠেছিল কামনার আগুন। অসংযত ইচ্ছার তাড়নায়, রাবণ রম্ভাকে ধরে ফেলেন এবং ফিসফিস করে বলেন, “আজ রাত আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। তুমি স্বর্গের অপ্সরী, কিন্তু আজ রাতে তুমি আমার হবে।”

আতঙ্কিত ও হতভম্ব রম্ভা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করল। তিনি বলেন, “না! আমাকে ছেড়ে দিন! আপনি আমার গুরুজন ও আত্মীয়, আমার কাকাশ্বশুর!” তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি কুবেরপুত্র নলকুবরের স্ত্রী রম্ভা। আমাকে অসম্মান করবেন না!” কিন্তু লঙ্কেশ কোনো বাধা না মেনে অহংকার ও লালসার বশবর্তী হয়ে ধর্ম ও ন্যায়বিচারের সমস্ত সীমা অতিক্রম করলেন। সেই রাতে, তিনি রম্ভাকে জোরপূর্বক লাঞ্ছিত করেছিলেন। কবি কৃত্তিবাসের ভাষায় :

“একে দশানন তাহে শৃঙ্গারে প্রবীণ।

একাসনে শৃঙ্গার করয়ে সপ্তদিন।।

রাবণের শৃঙ্গার না সহে কোনো নারী।

সহে মাত্র সবে রম্ভা আর মন্দোদরী।। “

কৃত্তিবাস নারীর কামবাসনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেছেন,

 “হাত পা আছড়ে রম্ভা রাবণের কোলে।

রাবণ শৃঙ্গার করে ধরি তার চুলে।।

রহ রহ বলি রম্ভা বলে রাবণেরে।

মুখেতে তর্জন করে হরিষ অন্তরে।।”

অতঃপর লাঞ্ছিত ও লজ্জিত রম্ভা তার স্বামী নলকুবরের কাছে গিয়ে তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া পরপুরুষের নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলেন। প্রবল ক্রোধে উন্মত্ত নলকুবের তাঁর কাকা রাবণকে অভিশাপ দিলেন, “যদি তুমি আর কখনও কোনো নারীর উপর জোর করে হাত দাও, তবে তোমার মাথা এক হাজার টুকরো হয়ে যাবে।”

জানা যায়, এই অভিশাপ রাবণকে সংযত করেছিল, কিন্তু তাকে শুদ্ধ করতে পারেনি। তিনি আর নারীদের জোরপূর্বক স্পর্শ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁর অহংকার এবং আত্মতৃপ্তির মনোভাব অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছিল। এই অভিশাপই পরে তাঁর জীবনে বড় ভূমিকা রাখে, যখন তিনি আবার সীতা দেবীকে অপহরণ করেছিলেন। প্রবল কামনা সত্ত্বেও, সে নলকুবরের অভিশাপের ভয়ে সতী সাবিত্রী সীতাকে স্পর্শ করতে পারেননি।

নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, রম্ভার প্রতি এই নির্মম আচরণই রাবণের পতনের সূচনা করেছিল। কারণ, ইচ্ছার সংযম ছাড়া শক্তি ও জ্ঞানও এক সময় ব্যর্থ হয়ে যায়। রম্ভার ওপর রাবণের এই অপরাধ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে অহংকার এবং ধর্মের অবমাননার ফল চূড়ান্ত পরিণতি ডেকে আনে। রাবণের পরিণতি প্রমাণ করে যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার সবসময় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা শেষ পর্যন্ত তাদের কর্মফল ভোগ করবেই।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

কাদের পরা উচিত পোখরাজ, পরিধানের আগে জেনে নিন নিয়ম

জেনে নিন, ত্রিকালজগতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বজ্রযোগিনীর অজানা কাহিনি

শ্যামপুরে জমজমাট জেলার একমাত্র তাল শাঁসের মেলা, চলবে টানা ৩ দিন

বাংলার “গু” বাঙালি নয়, জেনে নিন অজানা ইতিহাস

বিহারে হাড়হিম ঘটনা! রেলস্টেশনে বসেই ৪ সন্তানকে নিয়ে বিষ পান মায়ের

সিবিএসই’র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে চমকে দিয়েছে অ্যাসিড হামলার শিকার কাইফি

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর