এই মুহূর্তে




Rudraksh: রুদ্রাক্ষ কী, জানেন কি, এর মাহাত্ম্য?




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রুদ্রাক্ষ কি? আসলে রুদ্রাক্ষ শব্দটি গঠিত রুদ্রঅক্ষ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে, অর্থাৎ, রুদ্র অর্থে শিব ও অক্ষ অর্থে চোখের জল। অর্থাৎ, এর থেকে সহেজেই বোঝা যায়, রুদ্রাক্ষ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ভগবান মহেশ্বরের চোখের জল। পৌরাণিক কাহিনী মতে কথিত আছে, দুর্বিনীত অসুর ত্রিপুরকে বধ করতে গিয়ে দেবাদিদেব শিব দীর্ঘকাল অপলক নেত্রে যুদ্ধ করার কারণে তার অবসাদগ্রস্ত চোখ থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে একটি  অশ্রুবিন্দু। সেই অশ্রুকণা থেকেই জন্ম হয় রুদ্রাক্ষের। জ্যোতিষশাস্ত্র ও ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে যে কোনও ব্যক্তির জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও ভগবান শিবের আশীর্বাদ বজায় থাকে।

রুদ্রাক্ষ প্রকৃতপক্ষে একপ্রকার বৃহৎ ও চওড়া পাতাওয়ালা চিরহরিৎ বৃক্ষ, যার বীজ হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। মনে করা হয় এই রুদ্রাক্ষ হল মহাদেবেরই স্বরূপ ও শৈবরা একে মহাদেবের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ বলে মনে করে থাকেন। প্রধানত হিমালয় অঞ্চলে রুদ্রাক্ষ বৃক্ষ অধিক পরিমানে দেখা যায়। কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণ মাসে এই ফল ধরতে শুরু করে, যার বিজ্ঞান সম্মত নাম “এলিওকারপাস গ্যানিট্রাস”। যখন ফলগুলি বৃক্ষের উপর শুষ্ক হয়ে যায় তখন আপনা আপনিই মাটিতে খসে পড়ে। এই ফলের ওপরের খোসাটি শুকিয়ে যাওয়ার পরে ছাড়ালেই এই ফল রুদ্রাক্ষ রূপে বেরিয়ে আসে।

আকারের নিরিখে রুদ্রাক্ষের আকার গোলমরিচের দানা থেকে শুরু করে আমলকির আকার পর্যন্ত বিভিন্ন আকারে হয়ে থাকে। জানা যায়, রুদ্রাক্ষ যত ছোট হয়, ততো বেশি ফল প্রদান করে থাকে। শিবপুরাণের বর্ণনা অনুসারে রুদ্রাক্ষ চারটি বর্ণের হয়। সেগুলি যথাক্রমে : ক) ব্রাহ্মণ জাতীয়, খ) লাল আভাযুক্ত ক্ষত্রিয় জাতীয়, গ) হলুদ আভাযুক্ত ও ঘ) সূত্র জাঁতীয় বা সকল জাতের জন্য রুদ্রাক্ষ। এছাড়া ধরণের নিরিখে বলতে গেলে রুদ্রাক্ষ থেকে ২১ মুখী পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে ফলপ্রদানকারী হিসেবে রুদ্রাক্ষ থেকে ১৪ মুখী পর্যন্ত হয়ে থাকে।

একমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা দেবাদিদেব মহাদেব স্বয়ং ও নিয়ন্ত্রক গ্রহ রবি। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে যাবতীয় পাপ নাশ হয়। যে ব্যক্তিরা ক্ষমতা লাভ করতে চান, তাঁরা এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সুফল পাবেন। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশও ঘটে। এই রুদ্রাক্ষ সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।

দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষকে অর্ধনারীশ্বর বা হরপার্বতী রুদ্রাক্ষ বলা হয়ে থাকে। এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ চন্দ্র। আধ্যাত্মিক তৃপ্তির জন্য ব্যক্তিরা এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে পারেন। ধন, যশ, জনপ্রিয়তা লাভের জন্য এবং ইচ্ছে পূরণের জন্য এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা হয়।

ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা অগ্নিদেব, তাই একে অগ্নিদেবের রুদ্রাক্ষও বলা হয়। এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ মঙ্গল। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে পাপমুক্তি ঘটে। ভয় দূর হয়। এটি ধারণ করলে ব্যক্তির সমস্ত ইচ্ছে শীঘ্র পুরো হয়।

চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা ব্রহ্মা। এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ বুধ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ লাভ হয়। যে সব ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনায় মন বসে না, তারা এই রুদ্রাক্ষ ধারন করলে তা বিশেষ ফলদায়ক হয়।

পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা কালাগ্নি রুদ্র। এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ বৃহস্পতি। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে স্বাস্থ্য ও শান্তি সুরক্ষিত থাকে ও সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়।  পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ শান্তিদায়ক, পাপনাশক।

ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা কার্তিকেয় ও নিয়ন্ত্রক গ্রহ শুক্র। ধারণে শোক থেকে মুক্তি ঘটে। উচ্চশিক্ষা লাভ হয়। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে যৌনজীবন সুখের হয়।

সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাত্রী মহালক্ষ্মী ও নিয়ন্ত্রক গ্রহ শনি। এটি ধারণ করলে দুর্দশা দূর হয়। বাণিজ্যেও সাফল্য আসে। তাই একে সপ্তর্ষি সপ্তমাতৃকায়েং রুদ্রাক্ষ বলা হয়। এই রুদ্রাক্ষ রোগ নিবারক ও সমৃদ্ধিশালী।

অষ্টমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা গণপতি। এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ রাহু। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে বাধা-বিপত্তি দূর হয়। শত্রুনাশ হয়।

নবমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা ও এর নিয়ন্ত্রক গ্রহ কেতু। এই রুদ্রাক্ষ ধারণের ফলে ধারকের জীবনে শক্তি সঞ্চারিত হয়, ভয় দূর হয়।

দশমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা বিষ্ণু। এই রুদ্রাক্ষ নানা অশুভ শক্তি নাশ করে। জীবনে আনন্দের আগমন ঘটানোর জন্য এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা হয়ে থাকে।

একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাতা হনুমান। এই রুদ্রাক্ষ ধারণের ফলে ধারকের জ্ঞান, বিচারবুদ্ধি, বাকশক্তি বৃদ্ধি পায়।

দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ : এই রুদ্রাক্ষ অন্য সমস্ত রুদ্রাক্ষের চেয়ে ভিন্ন। এর অধিষ্ঠাতা দেবতা সূর্য ও নিয়ন্ত্রক গ্রহ রবি। এই রুদ্রাক্ষ ধারণের ফলে ধারক লাভ করেন খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করে থাকে। সাংসারিক মানুষেরা যারা সহবাস করেন, তাদের এই রুদ্রাক্ষ ধারণকরা উচিত না।

রুদ্রাক্ষ ধরণের ফলাফল :

  • রুদ্রাক্ষের চৌম্বকীয় আবেশের জন্যে দেহে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
  • রুদ্রাক্ষ হৃদযন্ত্রের স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • রুদ্রাক্ষ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • রুদ্রাক্ষ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
  • রুদ্রাক্ষ দাম্পত্য জীবনে সুখ শান্তি নিয়ে আসে।
  • রুদ্রাক্ষ বিভিন্ন অশুভ শক্তি বিনাশ করে।
  • রুদ্রাক্ষ আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটায়।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

রাজ্যে দুর্গাপুজোয় মদ বিক্রিতে আবগারি দফতরের আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ

Lakshmi Puja : এই মন্ত্র পাঠ করলে ভক্তের ওপর সদা সর্বদা প্রসন্ন থাকবেন মা লক্ষ্মী

জানেন কী কার অভিশাপে দেবী লক্ষ্মীকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সমুদ্রগর্ভে?

নাচতে নাচতে মৃত্যু, দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে করুণ পরিণতি যুবকের

বাবার খুনি ধরতে পুলিশে চাকরি মেয়ের, ২৫ বছর বাদে পাকড়াও করলেন কিলারকে

মধ্যবিত্তের কপালে ভাঁজ, উৎসবের মরসুমে আকাশ ছুঁল সোনার দাম

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর