নিজস্ব প্রতিনিধি: উপাচার্য(VC) নিয়োগ নিয়ে রাজ্য(State Government) ও রাজ্যপালের(Governor) মধ্যেকার সংঘাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)। আর তার জেরেই এবার স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি(Search Committee) গঠনের নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশ অনুযায়ী ওই কমিটিতে রাজ্য, রাজ্যপাল এবং UGC’র তরফে কমপক্ষে ৩-৫জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম থাকবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। তার আগে ২৫ সেপ্টেম্বরের সেই সব নাম জমা দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। আর এই রায়ের জেরে এখন রাজ্যের শিক্ষামহলের দাবি, রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যে বিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছিল তাতে কার্যত নজীরবিহীন পদক্ষেপ করল দেশের শীর্ষ আদালত। না রাজ্য সরকার, না রাজ্যপাল। কাউকেই দেশের শীর্ষ আদালত একক ভাবে উপাচার্য নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হল। বরঞ্চ রাজ্য সরকার , রাজ্যপাল ও UGC-কে জুড়ে দেওয়া হল সার্চ কমিটি গঠনের পথে। একইসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নুইজের হাতেই আপাতত ক্ষমতা ধরে রাখল।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। সেই মামলার বক্তব্য ছিল, রাজ্যপাল যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তা বৈধ নয়। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন আচার্য। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য। ওই উপাচার্যদের বেতন বন্ধ করে দেয় শিক্ষা দফতর। রাজ্যের যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আচার্য। পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মেনে ওই নিয়োগ করা হয়নি।
রাজ্যপালের নিয়োগ করা ওই উপাচার্যদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) জনস্বার্থ মামলা করেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। গত ২৮ জুন হাইকোর্ট মামলা খারিজ করে আচার্যের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। গত ২১ অগস্ট এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, মামলার সব পক্ষকে নোটিস দিতে হবে। দু’সপ্তাহ পরে মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিন শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র বার করা যায় কি না দেখবে। তবে আংশিক সময়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না আদালত। এদিন সুপ্রিম কোর্টও জানিয়েছে, আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল থাকবে। তবে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য, রাজ্যপাল এবং UGC’র তরফে কমপক্ষে ৩-৫জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম জমা দিতে হবে যারা সার্চ কমিটিতে থাকবে এবং এই কমিটিই রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বাছাই ও নিয়োগ করবে।