নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বর্ধমান পূর্ব লোকসভা(Bardhaman Purba Constituency)) কেন্দ্রটি তৃণমূলের(TMC) দখলে রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৯ এই দুই সালের লোকসভা নির্বাচনেই এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হন সুনীল মণ্ডল। কিন্তু একুশের ভোটের পরে তিনি হুট করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ভিড়ে যান। যদিও একুশের ভোটে রাজ্যের যে সব জেলায় তৃণমূল সব আসনে জয়ী হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা। সেখানকার ১৬টি আসনই চলে যায় তৃণমূলের দখলে। তার পরে পরেই সুনীল ফের তৃণমূলে ফিরে এলেও এবারে জোড়াফুল শিবির আর তাঁকে প্রার্থী করেনি। আবার বিজেপিও সুনীলকে পাত্তা দেয়নি পরবর্তীকালে। পরিবর্তে পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি(BJP) প্রার্থী করেছে নদিয়া জেলার হরিণঘাটার দলীয় বিধায়ক তথা কবিয়াল অসীম সরকারকে(Ashim Sarkar)। কিন্তু এহেন তৃণমূলের গড়ে সেই অসীমের পাশেই দাঁড়াচ্ছে না মতুয়া মহাসঙ্ঘ(Matua Mahasangha)।
পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা যথা রায়না, জামালপুর, কালনা, মেমারি, কাটোয়া এবং পূর্বস্থনী উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রগুলি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। আবার ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ের মুখ দেখেছিল প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। সেই হিসাবে ৫ বছরে জয়ের ব্যবধান কমেছিল তৃণমূলের আর সেটাও প্রায় ২৫ হাজার ভোটের। এর নেপথ্যে ছিল এই লোকসভা কেন্দ্রে মধ্যে থাকা মতুয়া ভোটের একতা বড় অংশই বিজেপির দিকে চলে যাওয়া। সেই ভোট নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিল মতুয়া মহাসঙ্ঘ। অথচ এবারের লোকসভা নির্বাচনে সেই মতুয়া মহাসঙ্ঘই বলছে, বিজেপির কাছে তাঁদের কোনও কদর নেই। কোনও সম্মান নেই। কোনও গুরুত্ব নেই। আর তাই তাঁরাও এই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অসীমের পাশে নেই। মহাসঙ্ঘের নেতারা বেঁকে বসায় এখন গেরুয়া শিবির চাপে পড়ে গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্যকরী সভাপতি ননি সিংহ জানিয়েছেন, ‘আমরা কেউই বিজেপির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব আমাদের সম্মান দিচ্ছে না। প্রচারেও ডাকছে না। বিজেপির হয়ে ভোট করব কি না তা নিয়ে ঠাকুরবাড়ি থেকেও স্পষ্ট নির্দেশ আসেনি। প্রার্থীও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমাদের কোনও গুরুত্ব নেই। মতুয়াদের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। তা নিয়েও তারা কিছু বলছে না। সম্মান না দিলে আমরা প্রচার করব না।’ ঘটনা হচ্ছে, এই লোকসভা কেন্দ্রের কাটোয়া, কালনা, জামালপুর এবং মেমারি এলাকায় অনেক মতুয়া ভোটার রয়েছেন। শর্ত দিয়ে CAA আইন পাশ হওয়ায় মতুয়াদের একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ। বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁরা এখন তাই নিরন্তর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এই লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের দু’টি সংগঠন রয়েছে। একটি তৃণমূল প্রভাবিত, অন্যটি বিজেপিকে সমর্থন করে। তৃণমূলের মতুয়াদের সংগঠন যথেষ্টই শক্তিশালী। কিন্তু এবার বিজেপির প্রতি সমর্থন দেওয়া অংশটি বেঁকে বসায় কার্যত মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে পদ্মশিবিরের।