নিজস্ব প্রতিনিধি: হুগলি(Hooghly), এই জেলাই বাংলার জমি আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র। এই জেলার সিঙ্গুরের(Singur) টাটাদের ন্যানো প্রকল্পের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করার দৌলতে দানা বেঁধেছিল জমি আন্দোলন। সেই আন্দোলন শুধু যে বাংলার বুকে ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটিয়েছে তাই নয়, বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) পৌঁছে দিয়েছে বাংলার মসনদে। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টও সেই আন্দোলনের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় ও সিঙ্গুরে অধিগৃহীত জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কার্যত সেই সময় থেকেই হুগলি জেলাজুড়েই দাপট তৃণমূলের(TMC)। কিন্তু তাপরেও এসেছে ধাক্কা। উনিশের লোকসভা ভোটে জেলার ৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে হুগলি কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপির(BJP) তারকা প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। জেলার অপর কেন্দ্র আরামবাগে তৃণমূল জিতলেও জয় আসে মাত্র হাজার ভোটের ব্যবধানে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নে এবার পঞ্চায়েতে কী হবে?
আরও পড়ুন মুখে আমার রাম নাম, হৃদয়জুড়ে মমতার নাম
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি জেলা ও বাংলাজুড়ে বিজেপির উত্থান কার্যত তৃণমূলকেই কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। সব থেকে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল খাস সিঙ্গুরের বুক থেকে বিজেপি ১৫ হাজার ভোটের লিড তুলেছিল লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে একুশের বিধানসভা ভোটে সেই গেরুয়া দাপট অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। জেলার ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয় মাত্র ৪টি আসনে। গোঘাট, খানাকুল, আরামবাগ ও পুরশুড়াতে। ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রই আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। এই কেন্দ্রের মধ্যে থাকা জেলার অপর দুই বিধানসভা কেন্দ্র তারকেশ্বর ও হরিপালে অবশ্য জয়ী হয় তৃণমূল। তবুও সেই লোকসভা কেন্দ্রের ৪ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয় অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু লকেট যে লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সেই হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা জেলার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয় তৃণমূল। কার্যত সেই সময়ের পর থেকে গঙ্গার জল যত গড়িয়েছে আরামবাগ মহকুমা ব্যতীত জেলার সর্বত্রই জমি হারিয়েছে বিজেপি। বরঞ্চ তৃণমূল ফিরে পেয়েছে তার দাপট। মায় সিঙ্গুরেও।
আরও পড়ুন কুলতলিতে Shootout, গুলিবিদ্ধ তৃণমূলপ্রার্থী
এবার কী হবে? মানে পঞ্চায়েত ভোটে(Panchayat Election)! এবারেও যে হুগলি জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে যেতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। খালি দেখার বিষয় এবার জেলা পরিষদে বিরোধীরা বিশেষত বিজেপি খাতা খুলতে পারে কিনা। হুগলিতে ব্লকের সংখ্যা ১৮। জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা ৫৩। জেলার মধ্যে একমাত্র গোঘাট-১ ব্লকে জেলা পরিষদের রয়েছে ২টি আসন। বাকি সব ব্লকেই ৩টি করে জেলা পরিষদের আসন আছে। একুশের ভোটের পরিসংখ্যান বলছে আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকে থাকা ১৭টি জেলা পরিষদ আসনেই এগিয়ে আছে বিজেপি। কিন্তু জেলার বাকি ৩৬টি আসনে এগিয়ে আছে তৃণমূল। জেলা পরিষদ দখল করতে গেলে ২৭টি আসনে জয় চাই। তাই তৃণমূল জেলা পরিষদ দখল করার বিষয়ে চিন্তিত নয়। তাঁদের চ্যালেঞ্জ গতবারের মতো এবারেও জেলা পরিষদকে বিরোধী মুক্ত রাখা। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, ঠিকঠাক ভোট হলে, মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারলে এবারে আর হুগলি জেলা পরিষদ বিরোধী শূণ্য থাকবে না। সেখানে খাতা খুলবে বিজেপি। তবে পদ্মের জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইএসএফ-ও।
আরও পড়ুন Cyber Crime’র শিকার বিয়ে পাগল শিক্ষিকা
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন কার্যত হুগলির মাটিতে বামেদের কোনঠাসা করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বাংলার মাটিতে বিজেপির উত্থানে নিজেদের ভোটই হারিয়ে বসেছিল বামেরা। কার্যত বাম ভোট চলে গিয়েছিল রামের ঝুলিতে। তার জেরেই উনিশের লোকসভা নির্বাচনে জেলায় দাপট দেখিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখন সেই ছবি বদলে গিয়েছে। জেলায় আর সেই দাপট নেই পদ্মের। বিশেষ করে আরামবাগ মহকুমা এলাকা ছাড়া। সেই সঙ্গে পদ্মের গোষ্ঠীকোন্দল তুঙ্গে উঠেছে। সভ দেখে বাম ভোট যা চলে গিয়েছিল রামের ঝুলিতে তা আবার ফিরতে শুরু করেছে লাল ঝান্ডার তলায়। তাই তৃণমূল বিরোধী ভোট এবার আর একচেটিয়া ভাবে পাবে না বিজেপি। বরঞ্চ তা ভাগ হবে দুই থেকে ৩ ভাগে। আর সেখানেই বড়সড় জয়ের মুখ দেখে নেবে তৃণমূল। তবে তা৬দের কাছেও চ্যালেঞ্জ জেলা পরিষদকে বিরোধী মুক্ত রাখার পাশাপাশি আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা ধরে রাখা।