নিজস্ব প্রতিনিধি: গত শনিবার রাতে এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একেবারে শেষ মুহূর্তে জয় তুলে নিয়েছে ভারত।খেলার ৮৬ মিনিটে সুনীলের দুর্দান্ত একটি ফ্রি-কিক থেকে এগিয়ে যায় ব্লু টাইগাররা। তবে মিনিট দু’য়েক পরই হেড থেকে সেই গোল পরিশোধ করে দেন আমিরি। তারপর খেলা ড্রয়ের দিকে যাচ্ছিল বলেই মনে করছিলেন সকলে। টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক সুনীলও তার বিকল্প ছিলেন না। কিন্তু সংযুক্তি সময়ে সাহাল আব্দুল সামাদের গোলে নাটকীয়ভাবে জয় তুলে নেন ব্লু টাইগাররা। তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দেশের ফুটবলের সেরা তারকা। ৩৭ বছর বয়সী সুনীল লম্বা একটি স্প্রিন্ট দিয়ে মাঠে ঢুকে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরেন। এতটা উচ্ছ্বসিত হতে সাধারণত দেখা যায় না তাঁকে।
ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই প্রসঙ্গ তুলতে সুনীল বলেন, ‘আমি সত্যিই ভীষণ খুশি ছিলাম তখন। দলের ছেলেরাও আমাকে এটা জিজ্ঞেস করে যে, দাদা যখন গোল করো, তখন তো কোনও সেলিব্রেট করো না। কিন্তু আজকের মুহূর্তটা অন্যরকম ছিল। আমি নিজের ও মনবীরের ওপর তখন একটু চটে ছিলাম। কারণটা বলা যাবে না। গোল খেয়ে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম তখন। কিন্তু ব্র্যান্ডন, আশিক, উদান্ত, সহাল মিলে যখন গোলটা করল, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। এত লম্বা স্প্রিন্ট বোধহয় আমার ফুটবল জীবনে কখনও দিইনি। আমার জিপিএস বোধহয় সে রকমই বলবে।’
বারবার প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় দলে সুনীল ছেত্রী ছাড়া গোল করার কেউ নেই। এই কথা মানতে রাজি নন বিশ্বে সর্বাধিক গোলের তালিকায় তিন নম্বরে থাকা এই ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘সুনীল ছেত্রীকেই যে গোল করতে হবে সবসময়, তার কোনও মানে নেই। সহাল তো রয়েছে। আশিকও প্রায় গোল করে ফেলেছিল। দলে আমার ভূমিকা সামান্যই। প্রত্যেকেরই অল্প অল্প করে সমান ভূমিকা রয়েছে। তেমন আমারও আছে। আনোয়ার, রোশন, গুরপ্রীত, সন্দেশরা কত ভাল খেলেছে, তা সবাই দেখেছে। ওরা ভাল না খেললে আমি গোল করার সুযোগই পেতাম না।’
নিজেকেও দলে বাড়তি গুরুত্ব দিতে রাজি নন ভারত অধিনায়ক। তাঁর মতে, ‘আসলে দলে আমার ভূমিকাটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাই লোকে আমাকে নিয়েই বেশি আলোচনা করে। আমি মাঠে থাকলে ছেলেরা বোঝে তাদের প্রত্যেককে কী করতে হবে। আমি মাঠে সবার সঙ্গে কথা বলতে থাকি। যার জন্য আমার ভূমিকাটা হয়তো একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেমন সামনে চেঁচাই, পিছন থেকে সন্দেশ, গুরপ্রীতরা চেঁচায়। বাকিরা আমাদের কথা মতোই চলার চেষ্টা করে। এগুলোই আমাদের করণীয়।’
গত রবিবারই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৭ বছর পূর্ণ করছেন সুনীল ছেত্রী। ২০০৫ সালের ১২ জুনই দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। শনিবার এই স্মরণীয় জয়ের মাধ্যমেই দলনেতাকে এই উপলক্ষে সেরা উপহার দেন তাঁর দলের ছেলেরা। যুবভারতীর গ্যালারি সেদিন সারাক্ষণই ছিল সরগরম। মাঠে আসা দর্শকদের প্রশংসা করে সুনীল বলেন, ‘দর্শকরা অসাধারণ ছিলেন। আমার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে এই রকম দেখা যেত। আশা করি, দর্শকেরা তাদের পয়সা, সময় সব উশুল করে নিতে পেরেছেন। ওরা নিশ্চয়ই ম্যাচটা উপভোগ করেছেন এবং বাড়ি ফিরে সকলে বলেছেন, দারুন একটা ম্যাচ দেখে এলাম।’