নিজস্ব প্রতিনিধি: নিছক গুজব ও সন্দেহের বশে পুরুলিয়া জেলায়(Purulia District) গঙ্গাসাগরগামী সাধুদের মারধর(Monks Harassments) ও তাঁদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই ১২জনকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি ঘটনার জেরে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তও শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার কাশীপুর থানা(Kashipur PS) এলাকার গৌরাঙ্গডি এলাকায় শো দেড়েক জনতা সাধুদের নিয়ে গঙ্গাসাগরগামী একটি গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। সেই সঙ্গে ৩জন সাধুকে মারধরও করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ(Police) জানতে পারে নিছক গুজব ও সন্দেহের জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এদিনই এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ১২জনকে রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে এখন বিজেপির(BJP) তরফে জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করা শুরু হয়েছে। তার জেরে তৃণমূলও(TMC) এবার পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে ৩ সাধু সহ ৫জন একটি চার চাকার গাড়িতে গঙ্গাসাগর যাচ্ছিলেন। মাঝপথে ওই গাড়িটি কাশিপুর থানার গৌরাঙ্গডি মোড়ে থামে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে তিন তরুণী সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল ওই তিন গেরুয়া বসমধারি সহ পাঁচজন। ফলে ভয়ে ওই তরুণীরা সাইকেল ফেলে ছুটে পাশের একটি ইট ভাটায় পৌঁছান। পরে ছেলে ধরার গুজর রটতেই ওই গাড়িকে ঘিরে ধরে এলাকার উত্তেজিত মানুষ। অভিযোগ ৩ সাধু সহ ৫জনকে মারধর করার পাশপাশি তাদের গাড়িটি ভাঙচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আক্রান্তদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। উদ্ধার করা হয় ভাঙা চোরা ৪ চাকার গাড়িটি। যদিও আক্রান্ত সাধুদের দাবি, তারা গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে গৌরাঙ্গডি মোড়ে নেমেছিলেন। সেখানে কয়েকজন তাদের টাকা পয়সা দিয়ে সেবা করেন। পরে সেখানকার একটি ইট ভাটায় কিছু দান দক্ষিণ নিতে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিন তরুণীকে পথ জানার জন্য জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু ভাষাগত সমস্যার জন্য তারা ভুল বুঝে ভয়ে পালিয়ে যায়। তারপর আচমকা তাদের গাড়ি আটকে ভাঙচুর চালায় ওই এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা বানানোয় সরব হয়েছে জোড়াফুল শিবিরও। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, ‘সন্দেহের বশে গ্রামের লোকেরা সন্ন্যাসীদের মারধর করেছেন। পুলিশ সাধুদের থানায় নিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবুও বিজেপি চিরাচরিত অভ্যাসে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নেমে পড়েছে। বিজেপি আইটি সেলের ছেলেরা যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটান, তখন অমিত মালবীয় চুপ করে থাকেন। আর অনুরাগ ঠাকুর বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন কথা বলছেন, তিনিই তো দেশের গদ্দারদের গুলি করার নিদান দিয়েছিলেন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে। তাঁরই তো জেলে থাকার কথা!’ আবার তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের ঘটনাকে তৃণমূল সমর্থন করে না। গুজবের জেরে এলাকার মানুষের জনরোষে এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা না থাকলে এবং পুলিশ সঠিক সময়ে না পৌঁছলে আরও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারত। বিজেপি এই বিষয়টিকে নিয়ে অযথা বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’