নিজস্ব প্রতিনিধি: বাউল শিল্পী হিসেবে যথেষ্ট নামডাক হয়েছিল বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার ফতেপুর গ্রামের সুশীলা দাসের। একাধিক গানের ক্যাসেটও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। এ ছাড়াও বাঁকুড়া এবং আশেপাশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও শিল্পী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। রবিবার সকালে সেই বাউল শিল্পীর দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হল তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে। সুশীলার বাপের বাড়ির অভিযোগ, সুশীলাকে পুড়িয়ে মেরেছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ১৩ বছর আগে সুশীলার বিয়ে হয়েছিল ফতেপুর গ্রামেরই শুভজিৎ দাসের সঙ্গে। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে। কিন্তু সুশীলার বাপের বাড়ির অভিযোগ, তাঁর ওপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করতে শুরু করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সুশীলার স্বামী শুভজিৎ দাসেরও তাতে পূর্ণ মদত ছিল। তবে এদিনের ঘটনায় সুশীলাকে বাঁচাতে গিয়ে নাকি আহত হয়েছেন।
সুশীলার বাপের বাড়ির দাবি, সুশীলার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদ তাঁকে নানা অপবাদ দিয়ে শারীরিক অত্যাচার করত। শনিবার রাতে তাঁরা ফোন করেছিলেন সুশীলাকে। কিন্তু সেই সময় তাঁদের জানানো হয় সুশীলা অসুস্থ তাই ফোনে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু রাতেই খবর আসে শ্বশুরবাড়িতেই আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন সুশীলা। আগুনে ঝলসেছেন শুভজিতও। তাকে নাকি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। এরপরই সুশীলার বাপের বাড়ির লোকজন দাবি তোলেন তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আভিযোগ দায়ের করে সুশীলার বাপের বাড়ির লোকজন। এরপরই রবিবার সকালে ইন্দাস থানার পুলিশ গিয়ে সুশীলার দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে মারধর করে সুশীলার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
সুশীলার বাবা জগন্নাথ দাস বৈরাগী বলেন, ‘গতকালই আমার সঙ্গে মেয়ের কথা হয়েছিল। আমাকে দুবার দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ ফোন করেছিল। তখনই জানতে পারি ওর স্বামী, শাশুড়ি আর ননদের সঙ্গে মেয়ের ঝগড়া হয়েছিল। মেয়ে জানিয়েছিল এরা আমাকে শুধু শুধু অপবাদ দিচ্ছে আর মারতে যাচ্ছে। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে জানায় ননদ ময়না ওর নামে বাজে অপবাদ দিয়েছে। আমার মেয়ের ননদের বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর ঘর না করে আমার মেয়ের সংসার নষ্ট করছিল। শনিবার রাত ১১টার সময় জামাই আমাকে ফোন করে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করে, যা মুখে বলার যোগ্য নয়। আমি সাধারণ ঝগড়া ভেবে খুব একটা না বুঝে বাড়িতে শুয়ে পড়ি। বুঝতে পারিনি মেয়েকে ওরা এভাবে মেরে ফেলবে। পরে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ওর পাশের বাড়ির এক পরিচিত ড্রাইভার আমাকে ফোন করে বলে জেঠু তাড়াতাড়ি মেয়ের খোঁজ খবর নাও। ওর কান্নাকাটি শোনা যাচ্ছে। এরপর আমি মেয়ের ননদকে ফোন করায় সে জানায় বৌদির অবস্থা খুব খারাপ বৌদি বোধহয় বাঁচবে না, দাদার অবস্থাও ভাল নয়। সেই সময় ওই বাড়িতে ওরা তিনজনই ছিল। ওরাই পুড়িয়ে মেরেছে মেয়েকে। আমার মেয়ে শিল্পী মানুষ, দিনরাত তাই নিয়ে ওর সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকত। এলাকার সকলেই জানে আমার মেয়ের দোষ নেই কোনও। এর আগেও ওকে একবাডর পোড়াতে গিয়েছিল। আমার মেয়ে চলে গেছে, কিন্তু ওই তিনজনের যেন কঠিন শাস্তি হয়।’