-273ºc,
Friday, 9th June, 2023 3:05 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের স্কুলে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে জমজমাট রাজ্য রাজনীতি। শাসককে এই ইস্যুতে প্রতিদিন বিঁধছে বিরোধীরা। একই সঙ্গে নিয়োগ চেয়ে আন্দোলনে বসে আছেন চাকরি থেকে বঞ্চিত প্রার্থীরাও। তাঁদের কেউ শিক্ষক-শিক্ষিকার পদে(Teachers Post) পরীক্ষা দিয়েছেন, কেউ বা Group-C বা Group-D পদে। কিন্তু এইসব আন্দোলন থেকে বহুদূরে গত কয়েক বছর ধরেই তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে আস্ত এক স্কুল। কেননা সেই স্কুলে নেই কোনও শিক্ষক। অথচ স্কুলের দুইতলা ভবন থেকে যে কেউ থমকে যাবেন। দোতলা সেই ভবনে পরিকাঠামোর কোনও অভাব নেই। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। তবু গত প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে স্কুল। এখন আর সেখানে শোনা যায় না কোনও ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ, শোনা যায় না পড়ুয়াদের কোলাহল। চোখে পড়ে না কোনও হুড়োহুড়িও। এই স্কুলের অবস্থান সুন্দরবনের কান ঘেঁষে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার মথুরাপুর ২ ব্লকের রায়দিঘির(Raydighi) বয়ারগদি এলাকার এই স্কুলের নাম দুঃখেরপোল জুনিয়র হাইস্কুল(Dukherpol Junior High School)।
১৯৬৯ সালে মথুরাপুর ২ ব্লকের কৌতলা পঞ্চায়েতে বয়ারগদি গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুলটি গড়ে ওঠে। ওই স্কুল স্থাপনের আগে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতেন এলাকার মানুষ। অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়ছিলেন অনেকেই। তাও পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুট লেগেই থাকত। এই স্কুল গড়ে ওঠার পরে গ্রামবাসীদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠানোর চিন্তা অনেকটা দূর হয়। শুরুর দিনগুলিতে এক বিঘা দানের জমিতে মাটির দেওয়ালে খড়ের ছাউনির ঘরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন চলত। পরবর্তীকালে সরকারি অনুমোদনের টাকায় স্কুলের দোতলা ভবন তৈরি হয়। ৮টি শ্রেণিকক্ষ, অফিস ঘর, ৫টি শৌচালয়, মিড ডে মিলের রান্নাঘর, পানীয় জলের নলকূপের ব্যবস্থা, খেলার মাঠ— সবই তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে মাধ্যমিকের অনুমোদন পায় স্কুলটি। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে নবম-দশম শ্রেণির পঠন-পাঠন চালু করা যায়নি। ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত সেখানে ছিলেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক। অথচ তখনই পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৭০ জন। তাঁরা সবাই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছিল।
২০১৭ সালে এক জন শিক্ষক অবসর নেন, আরও এক জন কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে চলে যান। ফলে স্কুলের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ওপরে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তিনিও অবসর নেন। সেই থেকে স্কুলটির দরজা বন্ধ হয়েছে। সে সময়ে ৩০-৪০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। তারা আশপাশে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে চলে যায়। এই স্কুলে বয়ারগদি ছাড়াও দুঃখের পোল, বকুলতলা, হাতিপাড়া ও ও মাঝেরপাড়ার পড়ুয়ারা পড়তে আসত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ির কাছে আস্ত একটি স্কুল থাকা সত্ত্বেও সময় মতো শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় তাঁদের ভুগতে হচ্ছে। গ্রামবাসীদের দাবি, স্কুলটি বন্ধ হওয়ার মুখে ২০১৯ সালে শিক্ষক নিয়োগের দাবি নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। সে সময়ে প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যত স্কুলটি বন্ধই হয়ে গেল।