নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। সেই ছবিটাই ধরা পড়ল ইদের সকালে মুর্শিদাবাদের(Murshidabad) বুকে। মায়ের ক্যান্সার(Cancer) সারাতে মন্দিরে না গিয়ে মসজিদে এসে মানত করেছিল ছেলে। সেই রোগ সারতে তাই আর দেরি না করে ইদের সকালেই ছেলে চলে এসেছিল মসজিদে। সেখানে ইদের নামাজ শেষ হতেই নিজে হাতে ঝাঁটা দিয়ে গোটা মসজিদ সাফ করে দিল ছেলে। এ ছবি একদিকে যেমন বিশ্বাসের তেমনি অন্যদিকে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিরও। যে যুবক এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁর নাম দেবপ্রিয় মজুমদার(Debapriya Majumdar)। বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ শহরের ইচ্ছাগঞ্জে। রবিবার সকালে ইদ উল আযহার-এর নামাজ শেষ হওয়ার পর দেবপ্রিয় বাট্টালি মসজিদে গিয়ে পবিত্র স্থান ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।
জানা গিয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ দেবপ্রিয়র মা দেবীরানী মজুমদার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তারপর তাঁর দীর্ঘ চিকিৎসা চলে মুম্বইতে টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে। সেখানে কয়েকজন মুসলিম যুবকের রক্তে নতুন জীবন ফিরে পান দেবীরানী। মুসলিম ভাইদের এই রক্তঋণ শোধ করার উদ্দেশে এই বছর রমজান মাসে মুর্শিদাবাদ পুরসভা এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাড়ি আর মসজিদ ঘুরে ইফতারের সামগ্রী বিতরণ করেছিল দেবপ্রিয়। রবিবার ইদ উল আযহার(Eid Ul Azhar) নামাজ শেষ হওয়ার পর মুসলিম ভাইদের পায়ের ধুলো যে মসজিদে পড়েছিল তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে দেয় সে। এদিন সকালেই স্নান করে দেবপ্রিয় বাট্টালি মসজিদে(Battali Masjid) পৌঁছে প্রথমে গোটা মসজিদ চত্বর ঝাঁট দেয়। তারপর চড়া রোদ মাথায় নিয়ে নিজে হাতে জল নিয়ে এসে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ধুয়ে দেন ফাঁকা মসজিদের বিভিন্ন কোন।
এই ঘটনায় দেবপ্রিয় এদিন জানিয়েছে, ‘আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল। তাই আমার মানত ছিল মা সুস্থ হয়ে উঠলে আমি একটি মসজিদ ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে দেব। আজ ইদ উল আযহার। এই পবিত্র দিনে আমি সেই কর্তব্য পালন করলাম। আজ আমার মুসলিম সম্প্রদায়ের দাদা-ভাইয়েরা নামাজ পড়ার পর আল্লাহর উদ্দেশে কুরবানীর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই হয়ত আজ তাঁরা সময়মতো মসজিদ পরিষ্কার করার সময় পাবেন না। সেই কারণে মসজিদ পরিষ্কার করার জন্য আজকের দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলাম।’ দেবপ্রিয়কে এই কাজ করতে দেখে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাই-বোনেরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বাংলা সহ ভারতের হিন্দু-মুসলিমরা যদি এভাবেই উভয়ের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে তাহলে দেশে শুধু যে হানাহানি কমবে তাই নয় দুই ধর্মের মানুষ আরও কাছাকাছি আসবেন। তখন হাজার নূপুর শর্মার হাজার বিদ্বেষ মন্তব্য দেশজুড়ে আর আগুন লাগাতে পারবে না।