নিজস্ব প্রতিনিধি: সভায় আসার আগেই নিজে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমজনতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। শুনেছিলেন তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। আর সভায় এসে সাফ জানিয়ে দিলেন তাঁর সিদ্ধান্তের কথা। যারা উন্নয়ন করেনি, আমজনতার দুয়ারে সরকারের পরিষেবা পৌঁছে দেননি, তাঁদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি। কার্যত রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, অনুন্নয়নের কারিগরদের নিয়ে আর চলবে না দল। গুরুত্ব পাবেন তাঁরাই, টিকিট পাবেন তাঁরাই যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে মানুষের দুয়ারে উন্নয়নকে পৌঁছে দিতে পারবেন। তিনি তৃণমূলের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। শনিবার বিকালে পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার অন্যতম মহকুমা শহর তথা অধিকারীদের খাস তালুক কাঁথির(Contai) প্রভাত কুমার কলেজের মাঠে আয়োজিত সভায় যোগ দিতে আসার পথে তিনি হুট করে মারিশদা (Marishda) এলাকায় আমজনতার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা করেন কথা বলেন। তাঁদের দুরাবস্থা এবং অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। আর তারপরেই সভা থেকে সাফ নির্দেশ দিলেন পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানকে পদত্যাগ করার। দলের অঞ্চল প্রধানকেও পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন ‘বিশ্বাসঘাতক বেইমান মুক্ত মেদিনীপুরের মাটি চাই’, ডাক অভিষেকের
শনিবার কাঁথিতে পা রাখার আগে মরিষদা গ্রামে গিয়ে তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক। তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে যান। দেখেন কোন দুরাবস্থায় রয়েছেন তাঁরা। নিজের কানে শোনের বার বার সরকারি পরিষেবা থেকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েও তা তাঁরা পাননি। আম্ফানে জোটেনি নূন্যতম সাহায্য, বাংলার বাড়ি চেয়েও পাননি তাঁরা, কোনও কোনও বাড়িতে বিদ্যুৎও নেই। ৮০টি পরিবার কার্যত চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত রাজ্য সরকারের অধিকাংশ আর্থসামাজিক প্রকল্প থেকে। বর্ষাকালে কোন্দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাতে তাঁদের তাও শোনেন অভিষেক। এটাও শোনেন পানীয় জলের সেখানে ঠিক কতটা তীব্র অভাব। আরও অবাক হয়ে যান এটা শুনে যে অধিকারীদের খাসতালুকের ওই অঞ্চলে একদিনের জন্যও অধিকারীদের কারও পা পড়েনি জেনে। গ্রামবাসীরা অভিষেককে হাতের নাগালে পেয়ে তাঁকে জানান, ‘আমরা তাঁদের ছবি দেখেছি। কিন্তু এখানে কোনওদিন কেউ আসেননি ওনারা। আপনি এসেছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো এখানে কেউ আসেনি। আমাদের কথা কেউ শোনে না।’
আরও পড়ুন ‘আমি ওদের উলঙ্গ করে দেব’, কাঁথিতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীরা, বিশেষত মহিলারা, হাতের কাছে তাঁকে পেয়ে তাঁকে বাড়ি, রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার জন্য আর্জি জানান। তাঁদের সকলকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘আমি দেখে গেলাম। যা করার আমি করব। আমি যখন তখন চলে আসব। এক কাপ চা খেয়ে যাব।’ সে কথা শুনে আরও খুশি হন গ্রামবাসীরা। কিন্তু অধিকারীদের গড়ে অধিকারীদের বিরুদ্ধে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ যে ভেসে উঠবে সেটা সম্ভবত তৃণমূলের কোনও নেতাই ভাবেননি। এরপরেই কাঁথির সভা থেকে তিনি জানিয়ে দেন, কাঁথি-৩ ব্লকের আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল, উপপ্রধান রমাকৃষ্ণ মণ্ডল এবং অঞ্চল সভাপতির ইস্তফাপত্র যেন তাঁর টেবিলে পৌঁছে যায়। সঙ্গে এটা জানাতেও ভুললেন না যে তাঁরা যদি ইস্তফা না দেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারিশদা ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধানের ইস্তফা চাই। না ইস্তফা দিলে আইনি ব্যবস্থা নেব এবং সরকারকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনুরোধ করব।’