নিজস্ব প্রতিনিধি: পাঁচিল বিতর্ককে আবারও বৃহস্পতিবার পূর্ণ দমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswabharati University) তথা শান্তিনিকেতনের(Shantiniketan) বুকে ফিরিয়ে আনলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী(Bidyut Chakrabarty)। কার্যত তাঁর নির্দেশে এদিন শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে সুরশ্রীপল্লি যাওয়ার রাস্তার ওপর যে অসমাপ্ত পাঁচিল তৈরির কাজ আটকে ছিল, সেটাই ফের পূর্ণ করার কাজ শুরু হয়। আর তার জেরেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কার্যত সেই সময় নিজের পদের ভারে বিক্ষোভকারীদের হুমকি ধমকি দিতে এলে তাঁকে ঘিরেই পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। বিশ্বভারতীর তরফে উপাচার্য তাঁদের আশ্বাস দেন, পাঁচিলের জায়গায় গেট করে দেওয়া হবে। তাতে দুই চাকার যান আমজনতা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারবেন। কিন্তু সেই কথায় কান দেননি বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা কার্যত জানিয়ে দিয়েছেন, পাঁচিল পুরো ভাঙা না হলে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ তুলবেন না।
আরও পড়ুন এখনই নদিয়া জেলা ভাগ হচ্ছে না, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই বিশ্বভারতীতে পাঁচিল নিয়ে আমজনতার সঙ্গে বিবাদের সূত্রপাত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে সুরশ্রীপল্লি যাওয়ার রাস্তার ওপর পাঁচিল নির্মাণ করেছিল। সেই নির্মাণ নিয়ে এলাকায় অশান্তির সূত্রপাত হওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার ও জেলাশাসক গিয়ে সেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। তারপর থেকেই ওই পাঁচিল অর্ধনির্মিত অবস্থাতেই পড়েছিল। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে পারতেন না। কারণ, পাঁচিলটি প্রায় সাত ফুট উচু করা হয়ে গিয়েছিল। এরপরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দেওয়া পাঁচিল কেউ বা কারা ভেঙে দেয়। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে যাতায়াত করতেন বাসিন্দারা। এদিন নতুন করে সেই পাঁচিলই আবারও নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়। আর সেই নির্মাণের কাজ আমজনতার চোখে পড়তেই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের জেরে কাজ বন্ধ হয়ে যেতেই মাঠে নামেন উপাচার্য। কিন্তু অভিযোগ, তিনি বিক্ষোভকারীদের হুমকি ধমি দিয়ে বিক্ষোভ সরাতে যেতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। তাঁরা সাফ জানিয়েচ দেন পাঁচিল ভাঙা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন আসছে নয়া ব্র্যান্ড ‘বাংলার শাড়ি’, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিন বিক্ষোভকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, এই রাস্তা বোলপুরবাসীদের যাতায়াতের অন্যতম একটি রাস্তা। প্রচুর মানুষ প্রতি দিন এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসতে তুলনানূলক ভাবে কম সময় লাগে বলে ক্যম্পাসের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন চিত্রা মোড় এবং ত্রিশুলাপট্টি এলাকার মানুষেরাও। কিন্তু গত বছর পাঁচিল তুলে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর তরফে। যাতায়াতে অসুবিধা হবে বলে স্থানীয়দের তরফে অনুরোধ করা হলেও পাঁচিল তোলার কাজ বন্ধ হয়নি। তবে চলতি বছরে এলাকার মানুষ ক্ষোভের বশে ওই পাঁচিল ভেঙে আবার যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করেছিলেন। এর পর থেকেই ওই রাস্তার মাঝে আবার পাঁচিল তোলার পরিকল্পনা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতি সকালে বিশ্বভারতীর তরফে ওই পাঁচিল তৈরি করতে গেলে বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এলাকার মানুষেরা। বিক্ষোভকারীদের তরফে স্থানীয় এক বাসিন্দা মিঠুন সামিম, হরিয়া রামানী, মিঠুন সাহানীরা জানান, ‘এই রাস্তা বহুদিনের রাস্তা। আমাদের জন্মের আগের রাস্তা। সকালে আমি মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে দেখি কাজ চলছে। আমি কাজ বন্ধ করে দিই। আমারা চাইছি এই রাস্তায় যাতে পাঁচিল না দেওয়া হয়। এটা নিয়ে আগেও বিশ্বভারতীয় সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। এই রাস্তা নিয়ে মামলা চলছে জানিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। এটা বিশ্বভারতীর নিজের জায়গা নয়। গোটা বোলপুরের(Bolpur) একাধিক জায়গা বিশ্বভারতীর ঘিরে নিচ্ছে। রাস্তা না খুললে আমরা এখানেই আন্দোলন করব। এখানেই বসে থাকব।’
আরও পড়ুন পূর্ত কর্মে খাপ্পা মমতা, মঞ্চ থেকেই দিলেন ধমক
অনেক কথা কাটাকাটির পর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায়, পাঁচিল তোলা হলেও একটি গেট তৈরি করে দেওয়া হবে। ওই গেট দিয়েই সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজেনি। বিক্ষোভকারী স্থানীয়রা জানিয়ে দেন, ‘এর আগেও এরকম বলা হয়েছিল কিন্তু পাঁচিল তোলার কাজ বন্ধ হয়নি। সেন্ট্রাল অফিসের সামনেও বিশ্বভারতী দুটি পাঁচিল তুলেছিল। গেট বসানো হয়েছিল। তারপরে সেখান দিয়ে এখন একমাত্র বাইক যেতে পারে, গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই রাস্তা করতে দেব না। দরকারে এখানেই বসে থাকব।’ আর এই পাঁচিল বিতর্কের জেরে এখন চূড়ান্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পৌষ মেলার(Poush Mela) ভবিষ্যৎ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলার কোনওরকম আয়োজনই এখন করা হচ্ছে না। বোলপুর পুরসভার পক্ষ বিশ্বভারতীর কাছে মাঠ ভাড়া দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে যেখানে বিকল্প মেলার আয়োজন করা হবে কিন্তু সম্ভবত সেই মাঠ ভাড়া দেওয়া হবে না। অর্থাৎ মেলা চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত।