নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রতীক্ষার অবসান। পাহাড়ের নয়া নেতা অনীত থাপা(Anit Thapa)। প্রায় এক দশক বাদে গত রবিবার পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিন্সস্ট্রেশন বা জিটিএ’র(GTA) নির্বাচন। সেই নির্বাচন বিজেপি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ বয়কট করলেও তাতে অংশ নেয় হামরো পার্টি(Hamro Party), ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা(BGPM), তৃণমূল কংগ্রেস(TMC), বামেরা ও কংগ্রেস। দীর্ঘদিন বাদে এই নির্বাচনে কোনও নেতা কোনও হুইপ জারি করেননি নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোট দেওয়ার জন্য। তাই তীব্র কৌতুহল তৈরি হয়েছিল পাহাড়ের মানুষ ঠিক কী করেন তা দেখতে! রবিবার ৬০ শতাংশের মানুষ ভোটদান করে কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা এখন উন্নয়ন আর শান্তি চান, একদমই চান না বনধ আর কোনও হিংসাত্মক আন্দোলন। আর তার জেরেই কৌতুহল আরও তীব্র হয় যে ঠিক কাদের হাতে জিটিএ-কে তুলে দিতে চান পাহাড়ের মানুষ, তা দেখার জন্য। বুধ সকালে দেখা গেল অনীত থাপার ওপরেই তাঁরা সেই আস্থা রেখেছেন।
বিমল গুরুং যখন পাহাড়ে বনধ ডেকে ফেরার হয়েছিলেন সেই সময় পাহাড়ে বনধ তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে এগিয়ে এসছিলেন বিনয় তামাং ও তাঁর ছায়াসঙ্গী অনীল থাপা। সেই সময় দুইজনই কার্যত পাহাড়কে সামলেছিলেন। পাহাড়ের মানুষের পাশে থেকেছিলেন। পরে সেই জুটিতে ভাঙনও ধরে। সেই সময় রাজ্য সরকার বিনয়কে জিটিএ চেয়ারম্যান করেছিল। গুরুং ফের পাহাড়ে ফিরে আসার পরে সেই পদ থেকেই ইস্তফা দেন বিনয়। সেই সময় রাজ্য সরকারই অনীতকে জিটিএ চেয়ারম্যান করে। সেই পদ পেয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই জিটিএ চালাচ্ছিলেন অনীত। রাজনৈতিক ভাবেও তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন তিনি। এরই নির্জাস এবার পেলেন অনীত। গুরুং বা মোর্চার সঙ্গে অনীতের সম্পর্ক ঠিক না হওয়ায় অনীত তাঁর নিজস্ব দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা বা বিজিপিএম গঠন করেন। যদিও কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া দার্জিলিং পুরসভার নির্বাচনে বিজিপিএম ভাল ফল করতে পারেনি। বরঞ্চ সেখানে বাজিমাত করে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি।
সেই নির্বাচন থেকেই শিক্ষা নিয়ে অনীত এবার অঘোষিত ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে জিটিএ নির্বাচনে অবতীর্ণ হন। জিটিএ’র ৪৫টি আসনের মধ্যে অনীত প্রার্থী দেন ৩৫টি আসনে আর ১০টি আসন ছেড়ে দেন তৃণমূলের জন্য। এবারের নির্বাচন ঘিরে অনেকেই কিন্তু ভেবেছিলেন হামরো পার্টিই হয়তো বাজিমাত করবে। সেই সঙ্গে আশঙ্কা ছিল জিটিএ না ত্রিশঙ্কু হয়ে যায়। কেননা প্রচুর নির্দল প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছিল। এদের বেশির ভাগ আবার মোর্চার সদস্য। একটা সময় মনে করা হচ্ছিল এই নির্দলরাই হয়তো কিংমেকার হয়ে উঠবে। কিন্তু বুধবার জিটিএ’র ভোটগণনা শুরু হতেই দেখা যায় একের পর এক আসনে এগিয়ে যেতে শুরু করে অনীত থাপার দল। শেষে ২৭টি আসনে জয় পেয়ে জিটিএ-তে একক ক্ষমতার জোরেই বোর্ড দখল করল অনীত থাপার বিজিপিএম।
হামরো পার্টি দার্জিলিং শহর ও ব্লকের বাইরে সেভাবে ভালো ফল করে দেখাতেই পারল না যা বলে দিচ্ছে এই দলটি দার্জিলিং শহর কেন্দ্রীকই। তাঁদের প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা ৮। অনীত থাপার দলের সঙ্গে জোট গড়ে পাহাড়ে লাভের মুখ দেখল তৃণমূলও। তাঁরা জয়ী হয়েছে ৫টি আসনে। সেই সব প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিনয় তামাং-ও। ৫টি আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। এদের মধ্যে আবার ৪জন অনীত থাপার সমর্থিত প্রার্থী যারা নির্দল হিসাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। এই ৪জনও এবার অনীতের দলে যোগ দিতে চলেছেন বলেই জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ মোট ৩১জন সদস্য নিয়ে জিটিএ বোর্ড গড়তে চলেছেন অনীত। তিনি নিজে যে ২টি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন সেই ২টিতেই জয় এসেছে। সেই হিসাবে একটি আসন থেকে তাঁকে ইস্তস্ফা দিতে হবে ও সেখানে উপনির্বাচন করাতে হবে। আর এই জয়ের জেরে পাহাড়ের অন্যতম ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন অনীত থাপা। পাহাড়ের রাজনীতিতে গুরুত্ব ও ক্ষমতা বাড়ল তৃণমূলেরও। মাঝখান থেকে ভোট বয়কট করে রাজনৈতিক ভাবে কার্যত অস্তাচলে চলে গেল বিজেপি, মোর্চা ও জিএনএলএফ। অস্তাচলে বিমল গুরুং-ও।